
একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, তোমার জন্য গলির কোণে, ভাবি আমার মুখ দেখাব, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। কথাগুলো কবি শঙ্খ ঘোষের। কবির এমন কথা মিলে যায় নগরীর সৌন্দর্য দেখতে গেলে। ব্যানার-পোস্টার ঢেকে গেছে নগর ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্য। যেখানে-সেখানে লাগানো হচ্ছে ‘ব্যানার-পোস্টার’। হাল আমলে প্রযুক্তি এগিয়ে গেছে অনেকদূর, প্রচার-প্রচারণার বিরাট বিস্তৃতি ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ার। সে জায়গায় বিভিন্নস্থানে ব্যানার-পোস্টার লাগানোয় শুধু সৌন্দর্যহানি ঘটছে তা নয়, এটিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে অবৈধ সুবিধা, রাজনৈতিক পক্ষপাত, চাঁদাবাজি, বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধার নেওয়ার হাতিয়ার হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনরা বলছেন এটা বন্ধ হওয়া দরকার। তাতে নগরের সৌন্দর্য ফুটে ওঠার পাশাপাশি অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপকৌশলও বন্ধ হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ষোলশহর ২ নম্বর গেট মোড়ে বাঁশ গেড়ে ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে টাঙানো হয়েছে রং-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন-পোস্টার। বাদ যায়নি ট্রাফিক সিগনাল ও সড়ক বাতির পোল এবং ফ্লাইওভারের পিলারও। তাতে অনেকটা আড়াল হয়ে গেছে মোড়ের স্বাভাবিক দৃশ্যপট। মোড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক বিপ্লব উদ্যান। এটিও ব্যানার-ফেস্টুনে অনেকটা আড়াল হয়ে গেছে। এ দৃশ্য শুধু ষোলশহর ২ নম্বর গেট নয়, শহরের সর্বত্র। রাজনৈতিক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও। কোন ধরনের নিয়মনীতি না মেনে এসব লাগানো হয়েছে। যাতে করে নগরের সৌন্দর্যহানি ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। একই অবস্থা দেখা গেছে, বহদ্দারহাট, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, কাজীর দেউড়ি, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট মোড়, কোতোয়ালী মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, নতুন ব্রিজ এলাকা, অক্সিজেন মোড়, প্রবর্তক মোড়, অলংকার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার। পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন থেকে বাদ যায়নি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও। রয়েছে সড়কের পাশেও।
এসব ব্যানারে তাকালে কিছু বিষয় দৃষ্টিগোচর হয়, যা দেখতে অনেক সময় অশোভনীয় লাগে। যেমন রং-বেরঙের পোস্টার ও ব্যানারের ওপরে এক পাশে ছোট সাইজে দলীয় প্রধানের ছবি, আরেক পাশে শোভা পাচ্ছে স্থানীয় নেতার ছবি (তিনি যে নেতার অনুসারী), তাও আবার এ ছবিও দেওয়া হয়েছে ছোট সাইজে। কিন্তু ব্যানার কিংবা পোস্টারে নিজের ছবিটা ডিজাইন করা হয়েছে বড় সাইজের। এসব এখন রাজনীতির মাঠে নতুন ট্রেন্ড (প্রবণতা)। হালে যুক্ত হওয়া এ ট্রেন্ড গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে। সংগঠনের পদ-পদবিহীন কিংবা ছোট পদে আসীন নেতাকর্মীর মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নগরবাসী রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন যুগের অবসান চায়। মূলত রাজনীতির মাঠে অবৈধ সুবিধা নিতে এ ধরনের পোস্টার, ফেস্টুন-ব্যানার টাঙাচ্ছে দলের সুবিধাবাদী কিছু ‘নেতাকর্মী’। দলের সিনিয়র নেতাদের ছবি ব্যবহার করে তারা পাড়া-মহল্লা, অলিগলি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রং-বেরঙের পোস্টার, ফেস্টুন-ব্যানার টাঙিয়ে নিজের শক্তিশালী অবস্থার জানান দিচ্ছে। এরপর কেউ কেউ সাধারণ মানুষ থেকে নানা কৌশলে আদায় করছে চাঁদা। এতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। বাণিজ্যিক সুবিধা নিতে তারা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টার, ফেস্টুন-ব্যানার টাঙাচ্ছে।
সাধারণ মানুষের দাবি, ব্যনার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানোর সংস্কৃতিতে অতীষ্ঠ জনগণ। তাই চট্টগ্রামের সৌন্দর্য রক্ষায় ধারণ করতে হবে রাজনীতিবিদদের। এই ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যনার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানোর সংস্কৃতি পরিহার করতে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় চট্টগ্রামের সৌন্দর্য রক্ষা করা কঠিন হবে।
এদিকে নানা রকম বিজ্ঞাপনের পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুনের কারণে সড়ক ও মোড়ের পাশের গাছও প্রায় ঢেকে যাচ্ছে। সড়কের পাশের গাছগুলো মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু হলেও সেটিও নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। গাছ পেরেকবিদ্ধ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ড, প্রতিষ্ঠানের ফেস্টুন-ব্যানার লাগানোর ঘটনাও ঘটছে। এতে সড়কের পাশের গাছগুলো পড়েছে ঝুঁকির মুখে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতেয়ার উদ্দিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘নগর এলাকায় কোন পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন লাগাতে হলে চসিক থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু অনেকে এ আইন মানে না। অনুমতি ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং অলিগলিতে পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন লাগায়। চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে এসব পরিষ্কারের। কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে। পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মচারীদের অনেক সময় নাজেহাল হতে হয়।’
পূর্বকোণ/পিআর