
পাহাড়ে ঘেরা, সবুজে মোড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তীর্ণ ক্যাম্পাসে এখন ভোটের হাওয়া। শাটলের প্রতিটি ঝংকারে, প্রতিটি করিডোরে ভেসে আসছে নির্বাচনী উৎসবের সুর। কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণা আর প্রতিশ্রুতির ভিড়ে এখন পর্যন্ত প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে ১২টি। যাচাইবাছাই শেষে নির্বাচন কমিশন বৈধ ঘোষণা করেছে ৪১০ প্রার্থীর নাম। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই লড়ছেন শক্তিশালী কোনো না কোনো প্যানেলের পতাকার তলায়; স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও দাঁড়িয়েছেন কেউ কেউ। সেই তাদের ভিড়ে উজ্জ্বল ছাবেকুর নাহার জিসান।
চাকসুতে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস)-এই শীর্ষ তিন পদে লড়ছেন তিন নারী। তাদের মধ্যে বাকি দুজন দুই প্যানেলের হয়ে লড়লেও ছাবেকুরই ব্যতিক্রম, যিনি লড়ছেন একাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই ছাত্রীর এই ‘একলা চলা’ একটাই কারণে। সব মতের, সব পক্ষের অভিন্ন কণ্ঠস্বর হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই যে তিনি নেমেছেন ভোটযুদ্ধে-সেজন্য হননি কোনো প্যানেলের প্রতিনিধি।
ছাবেকুর প্রতীকী জাতিসংঘ হিসেবে কাজ করা চিটাগং ইউনিভার্সিটি মডেল ইউনাইটেড ন্যাশনস এসোসিয়েশনের (সিইউমুনা) সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি সামলাচ্ছেন নিজ এলাকা বোয়ালখালীর বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংগঠন-বোয়ালখালী স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সহসভাপতির দায়িত্বও। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার সেই সব অভিজ্ঞতা আর মূলধনকে পুঁজি করে ছাবেকুর নেমেছেন নির্বাচনের মঞ্চে।
কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে-ছাবেকুর নাহার বলেন, ‘আপনি নিজেকে যোগ্য মনে করেন, নিজেকে ডিজার্ভিং হিসেবেও জানেন; অথচ আপনার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে সেবা করার সুযোগ আসার পরও সেই সুযোগ নেওয়ার কোনো চেষ্টা না করবেন না-তা তো হতে পারে না। ২০২৫ সালে এসেও দেখছি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সবখানে কোনঠাসা একটা মনোভাব বিরাজমান। এরপরও নারী শিক্ষার্থীরা থেমে নেই, তাঁরা সবার কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠছেন। সেই দিক দিয়ে আমি আশাবাদী হয়েছি নির্বাচন করার বিষয়ে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।’
দায়িত্ব নিতে এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবসময় প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন ছাবেকুর। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক ও শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি আমি বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম চরম ধৈর্য, সাহস ও সার্থকতার সঙ্গে পরিচালনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংগঠনে কাজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শিখেছি আমার ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, দক্ষতা অর্জন ও উন্নয়নে বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের কতটা ঘাটতি। এছাড়া শামসুন্নাহার হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে হল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অসঙ্গতির সাক্ষী আমি, আমরা। আমি আশাবাদী চাকসুর মাধ্যমে এসব অবস্থার অবসান ঘটবে, শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে প্রত্যাশিত ক্যাম্পাস।’
নির্বাচনে জয়ী হলে ‘ইনসাফ’ রক্ষা করতে চান ছাবেকুর। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি দক্ষতা, নেতৃত্ব ও যোগ্যতায় আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পাশাপাশি একজন প্রার্থীর নিজ দায়িত্বের প্রতি ইনসাফ রক্ষার আত্মবিশ্বাস থাকাটাও অতি-জরুরী। নির্বাচনে জয়ী হলে বিশ^বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি হয়ে কথা বলবো, কাজ করবো।’
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪৫ হাজার পরীক্ষার্থীর সঙ্গে ভর্তিযুদ্ধে লড়াই করে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ছাবেকুর। এবার তাঁর লড়াই ২২ প্রার্র্থীর সঙ্গে। এই লড়াইয়ে জিততে তিনি তাকিয়ে আছেন ২৭ হাজার ৬৩৪ জন ভোটারের দিকে। ছাবেকুর স্বপ্ন দেখেন, এখন একাকি লড়লেও জয়ের পর তার সেই লড়াই হয়ে ওঠবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
পূর্বকোণ/ইবনুর