
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এ ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা শেষে পাঁচ অনুষদের ২২টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে প্রতি বছর ভর্তি হন প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী। এখানে ভর্তি হওয়ারা প্রায় সবাই এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে আসা শিক্ষার্থী। বিজ্ঞানের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও চবি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ আশ্চার্যজনকভাবে কম। ‘সাদা ভবনের’ লড়াইয়ে নামা ১০ প্যানেলের শীর্ষ তিন পদের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই পদগুলোতে নির্বাচন করাদের মাত্র ১৩ শতাংশই বিজ্ঞানের বিভাগ-ইনস্টিটিউটগুলোতে পড়ুয়া ছাত্র। অর্থাৎ ৩০ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ জন।
চাকসুর নির্বাচনে নামা ১০টি প্যানেল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাতটিতেই সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভাগ-ইনস্টিটিউটে পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থী নেই। বাকি তিন প্যানেল থেকে চারজন বিজ্ঞান বিভাগ-ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নির্বাচনে লড়ছেন।
শিক্ষার্থীদের বিশাল অংশ নিয়ে গড়া বিজ্ঞান বিভাগ-ইনস্টিটিউটগুলো কেন নেতৃত্বের দৌড়ে পিছিয়ে, প্রশ্নটা এখন অনেকের মুখে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিজ্ঞান বিভাগ-ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত পরীক্ষার চাপ, গবেষণামুখী পড়াশোনা আর সময়সাপেক্ষ ল্যাব-জীবনের কারণে রাজনীতিতে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না।
৩০ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন: ছাত্রদল প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘স¤প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর একাংশের জোট ‘দ্রোহ পর্ষদ’, বাগছাসের একাংশের ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’, জাতিভিত্তিক সংগঠন ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের সমর্থিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, সুফিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’-এই সাত প্যানেলের প্রধান তিনটি পদে বিজ্ঞানের কোনো শিক্ষার্থী মনোনয়ন পাননি।
ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত-চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জের হয়ে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তামজিদ উদ্দিন। এছাড়া বিভিন্ন এক্সট্রা ও কো-কারিকুলাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত অরাজনৈতিক প্যানেল ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’র হয়ে জিএস পদে লড়ছেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন আর এজিএস পদে নির্বাচন করছেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাঈদ মুহাম্মদ মুশফিক হাসান। স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ও ছাত্র ফেডারেশনের স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট থেকে জিএস পদে লড়ছেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান বিভাগ-ইনস্টিটিউটে পড়া অন্তত ১০জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সবারই একটাই বক্তব্য, ‘আমাদের ক্লাস-পরীক্ষার চাপ এতটাই বেশি, রাজনীতিতে সময় দেওয়ার সুযোগই থাকে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা মেথডলোজিক্যাল। তাদের প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫-৬টা পর্যন্ত ক্লাস করতে হয়। এর বাইরে ব্যবহারিক (ল্যাব) ক্লাস থাকে। সবমিলিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা প্রায় সবাই চিন্তায় থাকে, কবে তাদের পরীক্ষা শেষ হবে আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাবে। এ জন্য তারা বেশিরভাগ সময় রাজনৈতিকভাবে যুক্ত হতে পারে না। আরেকটা বিষয়-আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটাই অন্যরকম। এখানকার নেতারা চান, তাদের পেছনে অযথা ছেলে-মেয়েরা হাঁটাহাঁটি করবে। কিন্তু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সেই সময় দেওয়ার সময়টুকু কোথায়? এ কারণে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রিয়পাত্র হতে পারে না।’
তবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে নিয়ে আসাটা জরুরি বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন। তিনি বলেন, ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচনে আরও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী যুক্ত হলে এবং জয়ী হয়ে আসতে পারলে তারা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, গবেষণার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারতো।
ভিপি পদের প্রার্থী তামজিদ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমি কলেজ জীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সেই দিক থেকে চিন্তা করে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কার্যক্রমও চালিয়ে আসছি। আমি চেষ্টা করছি নিজের সবকিছু সামলিয়ে আমার ছাত্র ভাই-বোনদের জন্য কিছু করতে। সেজন্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
শুধু যে প্রধান তিন পদে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কম তা নয়, চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বেশিরভাগ পদেই তাদের অংশগ্রহণ একেবারেই কম। চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ১১৬২ জন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৯৩০ জনের মতো মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে পড়ুয়া। তাদের বাইরে সমাজবিজ্ঞান, ব্যবসা ও আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরাও নির্বাচনে লড়ছেন। আগামী ১২ অক্টোবর এই নির্বাচন হবে।
পূর্বকোণ/ইবনুর