
চন্দনাইশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ ১০ জনের মধ্যে ৪ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে গতকাল প্রেরণ করা হয়েছে বলে চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ঢাকা উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে চন্দনাইশ বৈলতলী চর পাড়া এলাকায় সিলিন্ডার গ্যাস ক্রস ফিলিংয়ের সময় বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা নিমিষে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা অবস্থায় উঠে দিক-বেদিক ছুটাছুটি করে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের শরীরের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়। এদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে প্রেরণ করা হয়।
অবৈধ গ্যাস ক্রস ফিলিং গুদামটি যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তখন মালিক ও শ্রমিকসহ ১০ জন ছিলেন গুদামের ভিতরে। এ সময় তাদের শরীরে আগুন লেগে শরীর ঝলসানো অবস্থায় আর্তনাদ করে গুদাম থেকে বের হয়ে কান্নাকাটি করছিলেন। ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতো পোড়া শরীর নিয়ে সড়কে কেঁদে কেঁদে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। ভোরবেলায় ঘটনা হওয়ার কারণে যানবাহনের অভাবে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
জানা যায়, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক গুদামে সরকারি বড় বোতল থেকে ছোট বোতলে গ্যাস ক্রস ফিলিং ও বাজারজাত করা হয়। অবৈধভাবে গ্যাস ক্রস ফিলিং করতে গিয়ে এভাবে বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনোভাবে তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মাঝে-মধ্যে এসব অবৈধ গ্যাস ক্রস ফিলিংয়ের গুদামে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করা হলেও মাস না ঘুরতেই চালু হয়ে যায় ঐ সকল অবৈধ গ্যাস ক্রস ফিলিং গুদাম।
স্থানীয়রা জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়া গুদামে কিছুদিন পূর্বে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দিয়েছিল। কিন্তু মাস না ঘুরতেই একই গুদামে পুনরায় শুরু হয় গ্যাস ক্রস ফিলিংয়ের কাজ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনের ভয়াবহতা, মুহুর্মুহু বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তারা সবাই হতবাক। আগুনের লেলিহান শিখা, কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। এত বড় অগ্নিকাণ্ডের পর ১০ জনের বেরিয়ে আসাটা অলৌকিক মনে করছেন তারা।
খবর পেয়ে ঘটনার দিন চট্টগ্রাম জেলার সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক এস এম সাখাওয়াত হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া গুদামটিতে অবৈধভাবে গ্যাস ক্রস ফিলিং করা হতো বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন। বিশেষ প্রক্রিয়ায় সরকারি সিলিন্ডার থেকে অন্য সিলিন্ডারে গ্যাস স্থানান্তর করা হয়। এ কাজটি সম্পূর্ণ অবৈধ, বেআইনি ও বিপজ্জনক। এ অবৈধ কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হতো, গ্যাসের উৎস কী তা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। পাশাপাশি কোথায় কোথায় এ ধরনের অবৈধ গ্যাস ক্রস ফিলিং গুদামে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে খবর নিয়ে প্রত্যেক গুদামে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পূর্বকোণ/ইবনুর