
আসন্ন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অতীতের ফ্যাসিবাদী ‘পরিবারতন্ত্র’ পুনর্বহালের নতুন অপচেষ্টা শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এসএম নুরুল হক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এম এ লতিফের প্রেতাত্মারা আবার পারিবারিক চেম্বার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের পর বাতিল হওয়া টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের সদস্যদের আবারও বহাল করে নির্দিষ্ট একটি পরিবার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা চেম্বারকে আবারও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দখলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা তথ্য অনুযায়ী, এম এ লতিফের ছেলে ও আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজন ভুয়া ঠিকানা ও বানোয়াট কাগজপত্রের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে আপিল বোর্ডকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগও করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এসএম নুরুল হক বলেন, এটি ব্যবসায়ীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকে স্তব্ধ করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা। আমরা চেম্বারের প্রশাসক, নির্বাচন বোর্ড ও বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালকের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এসব ভুয়া সংগঠন ও সদস্যদের অবিলম্বে বাতিল করা হোক। অন্যথায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হকসহ আরো বক্তব্য রাখেন- ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এন্ড বিজনেসম্যান ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের (আইবিডব্লিউএফ) সেক্রেটারি শাহজাহান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ নন প্যাকার্স ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব রানা, আইবিডব্লিউএফ এবং সিবিএফের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কামরুল হুদা, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা রাশেদ আলী, ইমাদ এরশাদ, বিজিএমইএর প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ আবসার হোসেন, মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নেতা কাজী ইমরান প্রমুখ।
নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, পটিয়া এসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এম এ লতিফের ছেলে ওমর মুক্তাদির। পটিয়ার ধৌরাডেঙ্গায় ‘জি ডি মৎস্য খামার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটার হিসেবে পটিয়া এসোসিয়েশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তিনি। অথচ তার বাড়ি হলো নগরের খুলশী এলাকায়। নগরে বসবাস করে কিভাবে তিনি পটিয়া এসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন?
রাঙ্গুনিয়া এসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন আবছার হাসান চৌধুরী জসিম। তিনি লতিফের মামাতো ভাই জহুর আলমের ভাইরা ভাই। হাটহাজারী এসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন দুজন। এর মধ্যে মনির উদ্দিন হলেন লতিফের মেঝো সম্বন্ধীর (স্ত্রীর বড় ভাই) মেয়ের জামাই। বোয়ালখালী এসোসিয়েশন থেকে একজন ভোটার হয়েছেন যিনি অন্য জেলার লোক। চিটাগাং চেম্বারের একজন সাবেক সভাপতি। তিনি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বাতিলকৃত এসব টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্য প্রাথমিক ভোটার তালিকায় বাদ পড়ার পরও বানোয়াট কাগজপত্র দিয়ে আপিল করে ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আপিল বোর্ডকে অনেকটা বাধ্য করেছেন। যাতে এসব সদস্যকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট যে সাবেক এমপি লতিফের সন্তান এবং পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের আবারও চেম্বারের পরিচালক নির্বাচিত করে চেম্বারকে পুরোনো দিনের মত দখল করে রাখতে চান চেম্বারের এই প্রাক্তন সভাপতি।
বক্তারা আরো বলেন-অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, গত ২০ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসব সংগঠন অকার্যকর হওয়ার কারণে সদস্য পদ বাতিল হওয়ার পরে তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে এম এ লতিফের সন্তান ও আত্মীয়দের চেম্বারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যা অত্যন্ত অনৈতিক ও কোন মতে ব্যবসায়ীদের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা এই সব অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে এই সংগঠনের সদস্য পদ বাতিল করার জন্য চেম্বারের প্রশাসক, নির্বাচন বোর্ড এবং মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠনের নিকট বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি এসব অকার্যকর টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের এবং তাদের প্রতিনিধি স্বৈরাচারের দোসরদের চেম্বারের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা না হয় তাহলে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে তুলব।
পূর্বকোণ/ইবনুর