
চট্টগ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় অর্ধেকই ভুগছেন দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথায়। কিন্তু এরমধ্যে ফিজিওথেরাপি নিয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক জার্নালে (জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল এন্ড মেডিক্যাল সায়েন্স) প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শুধু চট্টগ্রামের ব্যাংকারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সারা দেশেই একই ধরনের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।
গবেষণায় চট্টগ্রামের নির্বাচিত ব্যাংকের ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ শতাংশ পুরুষ, ১৮ শতাংশ নারী। অধিকাংশের বয়স ৩১ থেকে ৫০ বছর।
গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরত শতাধিক কর্মকর্তার মধ্যে ৪৪ শতাংশই কোমর ব্যথায় ভুগছেন। দিনভর বসে কাজ করাই এর প্রধান কারণ। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আক্রান্তদের মাত্র ৬ শতাংশ ফিজিওথেরাপি নিয়েছেন। অনেকে ওষুধের উপর নির্ভরশীল থেকেছেন। আবার ২১ শতাংশ যৌগিক চিকিৎসা (ঔষধ+ফিজিওথেরাপি) গ্রহণ করেছেন।
অন্যদিকে, যারা কোনো চিকিৎসা নেননি, তারা জানান- সময়ের অভাব, ফিজিওথেরাপি কেন্দ্রের দূরত্ব এবং চিকিৎসার খরচই প্রধান বাধা।
এছাড়া, যারা ফিজিওথেরাপি নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করেছেন। বাকিদের অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক জার্নালে (মাসকুলোস্কেলেটাল কেয়ার) প্রকাশিত জাতীয় গবেষণায়ও দেখা গেছে, বাংলাদেশের রোগীরা দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথার কারণ সঠিকভাবে বুঝতে পারছেন না। চিকিৎসকদের প্রভাব, সামাজিক ধারণা ও ভুল প্রত্যাশার কারণে ফিজিওথেরাপিকে অনেকেই শেষ বিকল্প হিসেবে দেখছেন। ফলে অধিকাংশ রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে সক্রিয় ফিজিওথেরাপি বাদ দিয়ে ওষুধ কিংবা প্যাসিভ পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন।
চমেক হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহাবিলিটেশন বিভাগের চিফ ফিজিওথেরাপিস্ট মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকেই দীর্ঘ সময় ব্যথা নিয়ে অপেক্ষা করেন। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি নেওয়া হয়, ব্যথা অনেক সহজে কমানো যায়। সঙ্গে বসার সঠিক ভঙ্গি, প্রতি ঘণ্টায় উঠে দাঁড়ানো, স্ট্রেচিং এবং নিয়মিত ব্যায়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখি রোগীরা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে আসেন। অথচ প্রাথমিক পর্যায়েই ফিজিওথেরাপি নিলে ব্যথা সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।
এমন বাস্তবতার মধ্যেই আজ ৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হল- ‘সুস্থ বার্ধক্যে ফিজিওথেরাপি- পড়ে যাওয়া ও দুর্বলতা প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব’।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারি চাকরিজীবী ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশন (বিজিইপিএ) ও বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশন (বিপিএ) কর্তৃক সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ করা হবে। এর বাইরেও বিভিন্ন থেরাপি সেন্টারের উদ্যোগে রোগীদের সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর