চট্টগ্রাম শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

হাত হারানোর শঙ্কায় নাইমুল, চোখ মেলেননি সায়েম
চিকিৎসাধীন দুই শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ

হাত হারানোর শঙ্কায় নাইমুল, চোখ মেলেননি সায়েম

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন দুই শিক্ষার্থীর একজনের অবস্থার উন্নতি হলেও অন্যজন এখনও জীবনমৃত্যুর লড়াইয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনের লাইফসাপোর্ট খুলে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে এখনও লাইফসাপোর্টে আছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম।

 

অন্যদিকে, ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নাইমুল ইসলামের ডান হাতে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। প্রাথমিক অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হলেও আরও বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য অন্তত এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে তার হাতের ঝুঁকি কাটেনি।

 

এর আগে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে মামুন ও সায়েমের মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। দীর্ঘসময় ধরে অস্ত্রোপচারের পর দু’জনকেই লাইফসার্পোটে রাখা হয়। তাদের মধ্যে গতকাল সোমবার বিকেলে জ্ঞান ফেরায় লাইফসার্পোট খুলে নেয়া হয় মামুনের। তবে গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি সায়েমের।

 

পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউ কনসালট্যান্ট মোহাম্মদ আমীন জানান, মাথার খুলি ভেঙে যাওয়ায় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে দু’জনের। দু’জনকেই লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। মামুন ধীরে ধীরে সাড়া দিচ্ছেন, তবে সায়েমের জ্ঞান ফেরেনি।

 

পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম বলেন, ভর্তি হওয়ার পরপরই চিকিৎসক দল তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার শুরু করে। টানা প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী সেই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হলেও সায়েমকে এখনও শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করা যায়নি। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সায়েমের মাথার দুই পাশ ফেটে যায় এবং মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

রবিবার বিকেলে পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর পর ছেলের দিকে ছুটে যান সায়েমের মা শাহানাজ আমিন। কথার প্রসঙ্গে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সায়েমের মা বলেন, ঘটনার দিন সকালেও ছেলের সাথে কথা হয়েছিল। আমার ছেলে বলেছিল, বন্ধুদের নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে। কিন্তু এরপর আর কোন খোঁজ পাইনি। আমি শুধু দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন।

 

ঢাকায় প্রাথমিক অস্ত্রোপচার সম্পন্ন, ঝুঁকি কাটেনি নাইমুলের হাতের: সংঘর্ষে গুরুতর আহত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) ভর্তির পর তার ডান হাতে প্রাথমিক অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাতের প্রধান রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তবে একাধিক রগ ও স্নায়ু কেটে যাওয়ায় আরও বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য অন্তত এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জনদের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে আইসিইউতে রাখা হয়েছে তাকে।

 

নাইমুলের সাথে থাকা আদনান শরিফ আসিফ বলেন, অস্ত্রোপচারের পর আপাতত তিনি স্থিতিশীল আছেন, তবে হাত পুরোপুরি সচল হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানান, এমন রোগী হাজারে একজন হয়। আপাতত রক্তনালির অপারেশন করা হয়েছে। বাকি রগগুলোর অপারেশন আরও এক মাস পর সম্পন্ন করতে হবে।

 

এর আগে রবিবার সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্রের কোপে মাথা, হাত ও পায়ে মারাত্মকভাবে জখম হন নাইমুল। সহপাঠীরা প্রথমে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় নগরের ন্যাশনাল হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে সোমবার রাতে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। নাইমুল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা বর্তমানে প্রবাসে থাকেন।

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট