চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

কাগুজে জমি দিয়েই লোপাট ৭৪ লাখ টাকা

বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও তার ভাইয়ের নামে দুদকের মামলা

কাগুজে জমি দিয়েই লোপাট ৭৪ লাখ টাকা

ইমাম হোসাইন রাজু

১৯ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

২০১৩ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভায় আধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণে প্রকল্প নেয় সরকার। যার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। শুরু হয় জমি ক্রয়ের প্রস্তুতিও। এরপর যা ঘটেছে, তা যেন এক ভয়াবহ জালিয়াতির গল্প। বায়না দলিলের আগেই পৌর তহবিল থেকে তুলে নেওয়া হয় টাকা। কিন্তু সেই জমি আর পৌরসভার নামে রেজিস্ট্রিই হয়নি। অথচ জমি বায়নার এক দশক পার হলেও পৌরসভা বা সরকার সেই জমি আজও বুঝে পায়নি। কিন্তু ঠিকই চক্রের পকেটে চলে যায় সরকারের ৭৪ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত পুরো অর্থ গায়েব হয়ে যায়। যা আজও ফেরত পাওয়া যায়নি।

শুধু তাই নয়, যে ব্যক্তি থেকে জমি কেনার জন্য বায়না করা হয়েছিল, বাস্তবে তার ওই জমিতে কোনো মালিকানাই ছিল না। বরং তৎকালীন পৌর মেয়র শেখ ফখরু উদ্দীন চৌধুরী নিজেই নিজের

 

আপন ভাই শেখ মঈনুদ্দীন রেজা আলীর নামে বায়না করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। জালিয়াতির এ চিত্র ওঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দীর্ঘ অনুসন্ধানে।

 

এ ঘটনায় বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ ফখরু উদ্দীন চৌধুরী ও তার ভাই শেখ মঈনুদ্দীন রেজা আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। সোমবার (১৮ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে পৌর তহবিল থেকে ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নতির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সকল পৌরসভার জন্য ৫০০ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। যার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় সর্বমোট প্রায় ৬ কোটি টাকা। শর্ত ছিল পৌরসভা নিজস্ব বা বৈধভাবে অর্জিত জমি থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে পৌর পরিষদ জমি নির্বাচনে জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নির্ধারিত খতিয়ান ও দাগ অনুযায়ী জমি ক্রয়ের সুপারিশ করেন।

 

দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে, কমিটির সুপারিশকৃত জায়গা বাদ দিয়ে সাবেক মেয়র শেখ ফখরু উদ্দীন চৌধুরী ২০১৫ সালে বিবাদমান জমি বায়না করেন। বায়না দলিল সম্পাদনের আগেই পৌর তহবিল থেকে বিভিন্ন ধাপে ৬২ লাখ টাকা এবং পরে আরও ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। সর্বমোট ৭৪ লাখ টাকা জমি দাতাদের হাতে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি বায়না সম্পন্ন অনুযায়ী ৭ মাসের মধ্যে সাব কবলা রেজিস্ট্রি করার শর্ত ছিল। কিন্তু অদ্যাবদি পর্যন্ত সেই সাফ-কবলা দলিল সম্পন্ন হয়নি, জমি হস্তান্তরও হয়নি।
দুদক জানায়, বায়নাকৃত জমি দাতা ছিল তৎকালীন পৌর মেয়র শেখ ফখরু উদ্দীন চৌধুরীর ভাই শেখ মঈনুদ্দীন রেজা আলী চৌধুরী ও তার বোন ছৈয়দা মুনিবি আক্তার চৌধুরী। কিন্তু বায়নাকৃত জমি দাতাদের জমিতে কোনো বৈধ মালিকানাই ছিল না। বরং সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করতেই এমন ফন্দি আঁটেন পৌর মেয়র। যার কারণে সরকারের অর্থ চলে গেলেও এখন পর্যন্ত পৌরসভা জমি বুঝে পায়নি। অর্থও আর ফেরত আসেনি। এরমধ্যে বোন মারা যাওয়ায় তাকে মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

 

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপসহকারী পরিচালক ও মামলার বাদী মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, কমিশনের নির্দেশে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্তে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে পরবর্তীতে কমিশন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট