চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

অভিযান একমাত্র সমাধান নয়
নওশের আলী খান

অভিযান একমাত্র সমাধান নয়

নওশের আলী খান

১৩ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

সহজলভ্য ও স্বল্প খরচের কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশা অনেকে ব্যবহার করেন। তবে অবৈধভাবে উৎপাদন, ব্যবহারে আইনগত অনিয়ম এবং অনেক দুর্ঘটনার কারণ এটি। আশার কথা হচ্ছে-নগরের পরিবহন ব্যবস্থায় দিন দিন ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে ওঠা ব্যাটারি রিকশার চলাচল বন্ধে অভিযান জোরদার করার ঘোষণা দিয়ে গত সোমবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।

 

তবে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা হচ্ছে-শুধু সড়কে অভিযান চালিয়ে জব্দ করলেই ব্যাটারি রিকশার চলাচল বন্ধ হয় না। প্রশাসন নানা সময়ে অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার রিকশা জব্দ করেছে, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং অলি-গলি ছাড়িয়ে প্রধান সড়কেও ব্যাটারি রিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ যান্ত্রিক যান বন্ধে অভিযানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রাখছি।

 

যন্ত্রাংশ আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা: ব্যাটারি রিকশার জন্য যেসব যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়-তা আমদানি নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

 

চার্জিং স্টেশনে যৌথ অভিযান: বৈদ্যুতিক চার্জিং ছাড়া ব্যাটারি রিকশা চলতে পারে না। ফলে চার্জিং স্টেশন বন্ধ করা গেলে সড়কে এসব রিকশা চলার কথা না। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, নগর পুলিশ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে চার্জিং স্টেশন ও ওয়ার্কশপ সিলগালা করতে হবে।

 

অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন: নগরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারি রিকশার চার্জিং স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। অধিকাংশ চার্জিং স্টেশনে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এসব সংযোগ দ্রæত বিচ্ছিন্ন করতে হবে।

 

জব্দ করার পর স্ক্র্যাপিং করা: বিদ্যমান ব্যবস্থায় সড়ক থেকে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা জব্দ করার পর তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডাম্পিং স্টেশনে রাখা হয়। এরপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে জব্দ করার পর এসব ব্যাটারি রিকশা ছেড়ে না দিয়ে স্ক্র্যাপিং করা প্রয়োজন। এতে সড়কে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ হবে।

 

লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ব্যাটারি রিকশার জন্য রোডভিত্তিক কিছু ‘লাইনম্যান’ কাজ করে। তারা প্রতিটি রিকশা থেকে চাঁদা তুলে। যার ভাগ যায় বিভিন্ন মহলে। এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। চাঁদাবাজি বন্ধ হলে অবৈধ চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে।

 

বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা: হঠাৎ করে ব্যাটারি রিকশার চলাচল নিষিদ্ধ করলে হাজারো চালক বেকার হয়ে যাবেন। তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। হালকা পরিবহন খাতে তাদের অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

 

জনসচেতনতা বৃদ্ধি: চালক, যাত্রী ও মালিকদের কাছে ব্যাটারি রিকশার ঝুঁকি ও নিয়ম মানার গুরুত্ব তুলে ধরা দরকার। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় কমিউনিটির মাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রচার চালাতে হবে। ব্যাটারি রিকশার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনা ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।

 

পরিশেষে বলতে চাই- সবুজ পাহাড়, খরস্রোতা নদী আর দিগন্ত বিস্তৃত সাগরে ঘেরা অসাধারণ সুন্দর শহর চট্টগ্রাম। মাত্র ৬০ বর্গ মাইল আয়তনের এই শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন নতুন সড়ক, বড় বড় উড়ালসড়ক নির্মিত হয়েছে সত্যি-তবে প্রায় সোয়া ১ কোটি বাসিন্দার স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন-সেই আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।

 

সড়কগুলোতে কোথাও সিগন্যালিং সিস্টেম নেই। এখনও চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস। মোড়গুলোকে অবৈধভাবে স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী টানছে টেম্পো-মাহিন্দ্রা। পরিবহন খাত অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তাই নাগরিকদের জন্য সাশ্রয়ী আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে এই সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না। সড়কেও শৃঙ্খলা ফিরবে না।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট