
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেডিকেল অফিসার, রাজস্ব তত্ত্বাবধায়ক, কম্পিউটার অপারেটরসহ ১৮ পদে লোক নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। এর দুমাসের ব্যবধানে এপ্রিলে সংস্থাটি সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে লোক নিয়োগের জন্য আবারও বিজ্ঞাপন দেয়। যথারীতি এসব পদে লিখিত পরীক্ষাও হয়েছিল। এর মধ্যে সহকারী প্রকৌশলীর পদের রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু এটির মৌখিক পরীক্ষা আজ পর্যন্ত আর হয়নি। সরকারি সেবা সংস্থাটিতে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিল ২০১৭ সালে। গত আট বছরে ওয়াসা একাধিকবার লোক নিয়োগের উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। একই সময়ে ওয়াসার গ্রাহকের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলেও লোকবল বাড়েনি একজনও। উল্টো অবসরজনিত কারণে কমেছে ব্যাপক জনবলও। অথচ একই সময়ে ওয়াসার পানি উৎপাদনের সক্ষমতাও বেড়েছে আগের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ফলে প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় পদে পদে ভুগছে সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সর্বশেষ অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদের সংখ্যা এক হাজার ১১৯টি। কিন্তু বর্তমানে এসব পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ৫০২ জন। অর্থাৎ পদ শূন্য অর্ধেকের চেয়েও বেশি ৬১৭টি। বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে ওয়াসা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত এক দশকে ওয়াসার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এ কারণে অনুমোদিত নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এক হাজার ১১৯টি পদের বাইরে আরো ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ লোকবলের প্রয়োজন হবে। নতুনভাবে লোকবল দরকার ওয়াসার এমন প্রকল্পগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও ২, মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প, ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং স্যুয়ারেজ প্রকল্প।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম অর্গানোগ্রাম তৈরি হয় ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট। ওই সময়ে ওয়াসার লোকবলের পদ ছিল ৭২১ জন। এর ৫ মাসের ব্যবধানে ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় অর্গানোগ্রামে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ ছিল ৯৫৯টি। সেবা সংস্থাটির ২০১০ সালে পানি উৎপাদন হতো দৈনিক প্রায় ১৮ কোটি লিটার। ওই সময়ে ওয়াসার গ্রাহক সংযোগ ছিল ৪৯ হাজার ৪৭৩টি। লোকবলের পদ ছিল ৭২১টি। এরপর ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ১৪তম সাধারণ সভায় অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত সেটআপ (অর্গানোগ্রাম) কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫৯টি। এর দুবছর পর ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ৩২তম সাধারণ সভায় অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধিত সেটআপ (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী পদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১০৪৮টি। সর্বশেষ ২০২১ সালে এক হাজার ১১৯ জনের নতুন একটি অর্গানোগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ৫৮তম সাধারণ সভায় তৃতীয় সংশোধিত সেটআপ (অর্গানোগ্রাম) অনুমোদিত হয়। কিন্তু এ অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আর কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি। অথচ সংস্থাটির এখন গ্রাহক বেড়ে হয়েছে ৯৭ হাজার।
ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, লোকবল সংকটে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। অধিকাংশ কর্মকর্তাকে নিজের কাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত দুই থেকে তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে কোন কোন কর্মকর্তাকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে ওয়াসা চারটি পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তাতে পানি উৎপাদনের সক্ষমতা দৈনিক ১৮ কোটি লিটার থেকে বেড়ে ৫০ কোটি লিটার হয়েছে। এসব প্রকল্প চালু রাখতে প্রচুর লোকবল দরকার। বিশেষ করে জনবলের অভাবে প্রকৌশল শাখায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তাতে প্রভাব পড়ছে পানি সরবরাহে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মনোয়ারা বেগম পূর্বকোণকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে খুব সহসা ওয়াসার লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
পূর্বকোণ/পিআর