চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

চাকরিজীবীর বেতন ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত এক জনকে গ্রেপ্তার

খামবন্দী বেতনের টাকাটা ছিনতাইকারীর পকেটে

তাসনীম হাসান

১০ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

বেতন হাতে অফিস থেকে ফিরছিলেন এস এম শাহরিয়ার হাসান। সারামাসের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম শেষে পাওয়া টাকাটা নিয়ে এই তরুণের ছিল একরাশ স্বপ্ন-অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করানো, সংসারের খরচ মেটানো। এরপর নিজের প্রয়োজন চুকিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়া। কিন্তু সেই স্বপ্নটা ছিনতাই হয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডেই! কয়েকজন পকেটমার ভিড়ের মধ্যে কৌশলে পকেট থেকে নিয়ে নিয়েছে এই তরুণের রক্ত-ঘামে উপার্জিত বেতনের পুরো টাকাটাই। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেই ছিনতাইকারীদের চেহেরা চিহ্নিতও করা গেছে। কিন্তু চারদিন কেটে গেলেও তাদের ধরতে পারেনি পুলিশ।

 

এস এম শাহরিয়ার হাসান চাকরি করেন আবুল খায়ের গ্রুপে, মার্চেন্ডাইজার অফিসার হিসেবে। অফিসে বেতনের বড় অংশ তাদের নগদে দেওয়া হয়। পাহাড়তলীর অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বেতনের সেই ৫৮ হাজার টাকা আর ব্যাংকে জমা করতে পারেননি তিনি। পরে খামবন্দী বেতনের টাকাটা পকেটে নিয়ে তিনি কর্ণফুলীর দৌলতপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন। প্রতিদিনের মতো শাহ আমানত সেতু এলাকায় যেতে নিউমার্কেট মোড় থেকে টেম্পোজাতীয় মাহেন্দ্র-গাড়িতে ওঠতে যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই ছিনতাইকারীরা কৌশলে প্যান্টের বাম পকেটে থাকা টাকার খামটা নিয়ে ফেলেন। সময়টা ছিল ৬ আগস্ট, সন্ধ্যা ছয়টা ১৯ মিনিট।

 

বাকিটা শোনা যাক, এস এম শাহরিয়ার হাসানের মুখ থেকে, ‘নিউমার্কেট মোড়ে এমনিতেই ভিড় লেগে থাকে। এর মধ্যে ওইদিন সেখানে বিএনপির সমাবেশ থাকায় ভিড় ছিল প্রকট। আমি ভিড় পেরিয়ে মাহেন্দ্র গাড়িতে উঠার চেষ্টা করছিলাম। এমন সময়ে আমার পকেট থেকে টাকার খামটা নিয়ে ফেলে ছিনতাইকারীরা। পরে গাড়িতে উঠতে যাব-এমন সময়ে পকেট দেখি খালি খালি লাগে। তখন পকেটে হাত দিতেই দেখি টাকার খামটা নেই।’

 

দ্রুতই শাহরিয়ার হাসান ঘটনাস্থল থেকে ২-৩ মিনিট দূরত্বের কোতোয়ালী থানায় যান। সেখানে গিয়ে থানার ডিউটি অফিসারকে বিষয়টি খুলে বলেন। তিনি তাকে থানার সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে ওই সময়ে সেই কর্মকর্তা ছিলেন না। এরপর একজনের মাধ্যমে শাহরিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পুরো বিষয়টি জেনে মোহাম্মদ শরীফ নামের একজন উপপরিদর্শককে এই বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেন ওসি। এরইমধ্যে থানায় সংরক্ষিত ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ শাহরিয়ারকে দেখায় পুলিশ। সেই ফুটেজ দেখার পর পুলিশ ও শাহরিয়ার নিশ্চিত হন ছিনতাইকারীদের বিষয়ে। তিনজন ছিনতাইকারী তাকে বহুক্ষণ ধরে টার্গেট করে পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে। ভিড়ের সুযোগে এক পর্যায়ে চারপাশ থেকে ধাক্কাধাক্কি করে টাকার খামটা পকেট থেকে নিয়ে নেয় তারা। তবে সেই ভিডিও ফুটেজ পুলিশ শাহরিয়ারকে দেয়নি, শুধু ভিডিও থেকে ছবি তোলার সুযোগ দেয়। এই ঘটনায় পুলিশ কোনো সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) নথিবদ্ধ করেনি। সেদিন রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত থানায় থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য পুলিশের কাছে অনুরোধ করেন শাহরিয়ার।

 

শাহরিয়ার বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে ছিনতাইকারীদের চেহেরা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্লু-লেস ঘটনায়ও পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করে ফেলে। সেখানে আমার এই ঘটনায় তো ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা একেবারে সহজ। ঘটনাটি ঘটেছে, থানার একেবারে কাছেই। যদিওবা দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন, ব্যাটে-বলে মিললেই পেয়ে যাব। এখন জানি না কতদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

 

পুরো মাসের বেতনটা ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এস এম শাহরিয়ার হাসান। ঘরের এই বড় ছেলের কাঁধেই চারজনের সংসারের সব দায়িত্ব। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও থায়রয়েডের সমস্যায় অসুস্থ মা আফরোজ বেগমের নিয়মিত চিকিৎসা-ওষুধের খরচ তো আছেই।

 

এস এম শাহরিয়ার সেই আফসোস নিয়ে বলেন, ‘সারামাস পরিশ্রম করে বেতনটা পেলাম। সেই পুরো টাকাটাই কিনা নিয়ে নিলো ছিনতাইকারীরা। এখন মায়ের চিকিৎসা, পরিবারের খরচ-এসব ভাবতে ভাবতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’

 

ওইদিন রাতে দীর্ঘক্ষণ শাহরিয়ারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানলেও গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি মনে করতে পারেননি কোতোয়ালী থানার ওসি মো. আবদুল করিম। তিনি বলেন, ‘ওই তরুণকে আমার কাছে পাঠান। আমি বিষয়টি দেখবো।’

 

শাহরিয়ার এখন দিন গুণছেন-শিগগির টাকাটা উদ্ধার করবে পুলিশ, মায়ের চিকিৎসা আবার চলবে নিয়মমতো, সংসারের চাকাও আবার ঘুরবে আগের মতো!

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট