
নগরীর ১১শ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেকের বেশি এখন ক্ষতবিক্ষত। এরই মধ্যে কিছু সড়কের অবস্থা একেবারেই বেহাল। খানাখন্দ আর গর্তে ভরা এসব সড়কে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, নষ্ট হচ্ছে যানবাহন। চলতি বর্ষার বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। বৃষ্টি থামলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে ছোট বড় খানা-খন্দ সৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন গাড়িচালকেরা।
সেই সঙ্গে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরাও। যানবাহন উল্টো প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজটও। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় উঠে যাচ্ছে সড়কের পিচ, সৃষ্টি হচ্ছে গর্ত। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। সিটি কর্পোরেশনের পুরকৌশল শাখার তথ্যমতে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের ১১শ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, নগরীর সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জরুরি সভা করে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগামী সোমবারের মধ্যে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয় সভায়। এই তালিকা আগামী মঙ্গলবার চসিক মেয়রকে প্রদান করা হবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল মেয়রের নির্দেশে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের জরুরি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগামী দুইদিনের (রবিবার ও সোমবার) সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। আগামী মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকৌশল বিভাগ থেকে মেয়রকে প্রদান করা হবে।
এ পর্যন্ত কী পরিমাণ সড়ক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কিলোমিটারের মত সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ইপিজেড, বিমানবন্দরসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাময়িক মেরামত করা হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে ক্ষতিগ্রস্ত সবগুলো সড়কের কাজ পুরোদমে শুরু হবে।
নগরীর মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন মোড়, জাকির হোসেন সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, সিডিএ এভিনিউ, অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক, প্রবর্তক মোড় থেকে ২ নম্বর গেট, পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের নিমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত, সদরঘাট ও মাঝিরঘাট, বারিকবিল্ডিং থেকে ইপিজেড, কাটগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, বিমানবন্দর সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এসব সড়কে চলাচলরত চালকরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ছোট-বড় খানা-খন্দ তৈরি হয়েছে। যার কারণে গাড়ি চালানো দায় হয়ে পড়েছে। প্রায়ই বিকল হচ্ছে গাড়ি। এছাড়া ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়কে আপতত ইট বিছিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে দ্রæত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সবগুলো সড়ক পুরোপুরি মেরামত করা হবে।
নগরীতে বাণিজ্যিক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক স্ট্যান্ড রোড। সদরঘাট থেকে এ সড়ক মিলিত হয়েছে বারিক বিল্ডিং মোড়ে। দেড় কিলোমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে এ সড়কটির পাশেই রয়েছে ছোট বড় ২২টি ঘাট। আমদানি করা লোহার স্ক্র্যাপ, ভোগ্যপণ্য, পাথর, ক্লিংকারসহ বিভিন্ন পণ্য ট্রাক, কাভার্ডভ্যান কিংবা লরিতে করে পরিবহন করা হয় এসব ঘাট থেকে। কিন্তু গর্তের কারণে পণ্য পরিবহনে তৈরি হয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি।
জানতে চাইলে এই এলাকার পথচারী আব্দুল্লাহ আল মোশাররফ জানান, সড়কের বেহাল দশা থেকে মনে হয় না- চট্টগ্রাম নগরীর কোনো অভিভাবক আছে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান শহরের এমন সড়ক কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
পূর্বকোণ/ইবনুর