
ক্রিকেট মাঠে সেঞ্চুরি মানেই গ্যালারিতে উল্লাস। কিন্তু বাজারের সেঞ্চুরি? ওটা মানেই মধ্য ও নিম্নবিত্তের বোবাকান্না। কারণ এখন আর শুধু ব্যাটারের ব্যাটেই সেঞ্চুরি হচ্ছে না, বাজারের ঝুঁড়িতেও তা যেন নিয়মিত খেলছে। এই মুহূর্তে বাজারে এমন পাঁচটি সবজি রয়েছে, যেগুলো একশ টাকার গণ্ডি পেরিয়ে সেঞ্চুরি করে ফেলেছে নির্দ্বিধায়। মরিচ তো ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে। আলু ছাড়া বাকি সব সবজি ফিফটি পেরিয়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকার ঘরে আছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন, তিতকরলা, টমেটো, মরিচ, বরবটি-এখন ১০০ টাকার নিচে মিলছে না। এসব সবজির মধ্যে মরিচের দাম এখন সবচেয়ে বেশি-২০০। টমেটো ১৬০, বেগুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাকি দুটি বরাবর-১০০ টাকা। ঝিঙে, পটল, করলা, ঢেঁড়শ, শসা, কাঁকরোল, ধুন্দল-সবই ৫০টাকার ওপরে। এর নিচে শুধু আলু ২০-২৫, মিষ্টি কুমড়া ৪০, লাউ ৩৫-৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলিয়ে একসময় যেসব সবজি ছিল প্রতিদিনের পাতের অতি সাধারণ উপকরণ, এখন তা যেন বিলাসিতার তালিকায়।
বাজারে গিয়ে তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। সেজন্য দাম বেড়েছে। চট্টগ্রামের বহত্তর সবজির আড়ত নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার। এই বাজারের অধিকাংশ সবজি আসে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। এর বাইরে যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, মেহেরপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে সবজি আসে বাজারে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামের আশপাশের উপজেলা থেকে সবজি সরবরাহ করা হয়।
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সবজি নেই। অল্প যেসব সবজি আসছে, সেগুলোর মানও তুলনামূলক ভালো নয়। টানা বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির কারণেই মূলত বাজারে সবজির দাম চড়া। স্বাভাবিক সময়ে এই বাজারে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গাড়ি সবজি আসে। এসব গাড়িতে প্রায় আড়াই লাখ থেকে চার লাখ টাকার সবজি থাকে। তবে এখন বৃষ্টির কারণে সবজি কম আসছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সুখবর নেই মাছ-মাংসের বাজারেও। মুরগির দাম ৫-১০ টাকা কমলেও আবার ডিমের দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন ডিমের দাম এখন ১৩৫ টাকা। গরুর মাংস এখনো ১০০০ টাকা। মিঠা এবং লবণাক্ত পানির মাছ দুটোর দামও চড়া। পেঁয়াজের দামও হঠাৎ করে সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় মিলতো, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
দুই নম্বর গেটের কর্ণফুলী কমপ্লেক্স মার্কেটে বাজার করতে এসে হতাশ হয়ে পড়েন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শামশুল আলম। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়ে চলছে। কিছু কিছু সবজি তো আর হাতের নাগালেই নেই। সিন্ডিকেট করেই সবকিছু বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাজারে কোনো তদারকি নেই। যেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে-সিন্ডিকেটের এই কারসাজি আর আমাদের দুঃখ।
পূর্বকোণ/ইবনুর