
সাত বছর পর খুলেছে আশার দুয়ার। অবশেষে শুরু হচ্ছে হিজড়া খালের সংস্কার কাজ। জটিলতা কাটিয়ে নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ খালের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলেই আগামী ছয় মাসের মধ্যে শুরু হবে খননসহ অন্যান্য কাজ। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও অর্থসংকটের কারণে হিজড়া খালের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি।
গত জুন মাসে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির ১৪৭তম সভায় হিজড়া খালের ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সামনে আসে। সভায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল পেতে হিজড়া খালের গুরুত্ব তুলে ধরেন প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ। এরপর ওই সভায় ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন পায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ভূমি অধিগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা। এরপর তা সিডিএকে বুঝিয়ে দিলে অধিগ্রহণ করা জায়গায় কাজ শুরু করতে পারবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ অধিগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ২৫ সপ্তাহের মতো লাগতে পারে।
এবার বর্ষায় নগরীতে বিগত বছরের মতো জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারে নগরীর মেহেদীবাগ, প্রবর্তক, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। হিজড়া খাল সংস্কার না হওয়ায় মূলত এ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন সেসব এলাকার বাসিন্দা ও পথচারীরা।
প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ হিজড়া খালের সংস্কারের সময় উভয়পাশ থেকে দালান, সেমিপাকা, নির্মাণাধীন ভবন ও বহুতল ভবনসহ প্রায় ১৬০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনা ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় হবে ৪৬৫ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারলে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি দূর হবে বলে জানান প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে আমরা এতদিন হিজড়া খালের কাজ করতে পারিনি। গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির ১৪৭তম সভায় আমি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে হিজড়া খালের গুরুত্ব তুলে ধরেছি। তখন ওই মিটিংয়ে তা অনুমোদন হয়।
তিনি আরও বলেন, এরপর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এডিসি এলএ, সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমাদের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার মহোদয় বসেছেন। তখন ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কত সময় লাগতে পারে তা জানতে চেয়েছেন। এলএ শাখা ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সবমিলে প্রায় ২৫ সপ্তাহের মতো লাগতে পারে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।
জানতে চাইলে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক আহম্মদ মঈনুদ্দিন বলেন, দুটি এলএ কেসের মাধ্যমে হিজড়া খালের ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ঊর্ধ্বাংশ থেকে ১ দশমিক ৮ একর ও নিম্নাংশ থেকে ১ দশমিক ৬১ একর। মোট ৩ দশমিক ৪ একর জায়গা অধিগ্রহণের জন্য আমরা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে দুটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অর্থবরাদ্দ না পাওয়ায় ভূমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আগে শুরু করা সম্ভব হয়নি। হিজড়া খালের স্থাপনা ক্ষতিপূরণ ও ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া নতুন আরডিপিপি অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ব্যয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা এবং সময় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ।
পূর্বকোণ/ইবনুর