চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

সাবেক মন্ত্রীর ‘ইচ্ছেপূরণ’, প্রকল্পে ডুবছে পাউবো
ফাইল ছবি

পাউবোর জমি ইজারা বন্ধ, আগ্রহীদের কপালে ভাঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ জুলাই, ২০২৫ | ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

কাট্টলী ও হালিশহর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবৈধ দখলমুক্ত হওয়া ১১৭ একর জমি ইজারা পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন প্রভাবশালীরা। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইজারা স্থগিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে মাথায় ভাঁজ পড়েছে আগ্রহীদের।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (রাজস্ব ও উন্নয়ন) মো. ছাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দখল করা জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। সরকার অবৈধ দখলমুক্ত ও অন্যান্য সরকারি জমির সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবৈধ দখলমুক্ত হওয়া জমি ইজারা বা লিজ প্রদান থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) শওকত ইবনে সাহীদ পূর্বকোণকে বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জমি ইজারা স্থগিত করেছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিপত্র জারি করেছে। ইজারার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

 

গত সপ্তাহে নগরীর কাট্টলী ও হালিশহর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ১১৭ একর জমি অবৈধ দখলমুক্ত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব জমিতে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, গাড়ির গ্যারেজসহ পাকা ও স্থায়ী স্থাপনা ছিল। ৩৯ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি দির্ঘদিন ধরে এসব জমি দখল করে রেখেছিলেন। অবৈধ দখলদারের মধ্যে সাবেক সিটি মেয়র, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রভাবশালী নেতার নাম ছিল।

 

উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর থেকে ইজারা পেতে আবেদন করেছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে অনেকেই পুরোনো দখলদারও রয়েছেন। ইজারা পেতে আগ্রহীদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রীসহ বিএনপির নেতাকর্মীও রয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী ও উত্তর হালিশহর মৌজায় অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করা জমি ইজারা বা লিজ পেতে বিভিন্ন গোষ্ঠী আবেদন করেছেন। মূল্যবান এসব জমি সর্বোচ্চ জনস্বার্থে উপদেষ্টা কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থাপনা করা হবে। ফলে উদ্ধার করা কোন জমি ইজারা বা লিজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উদ্ধার করা জমি ইজারা চেয়ে যেসব আবেদন পাওয়া গেছে, সেসব আবেদন খারিজ করে দিতে হবে। অবৈধ দখলদারদের পুনর্দখল ঠেকাতে উদ্ধার করা জমির চারদিকে কাঁটা তারের বেড়া ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দখলস্বত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) শওকত ইবনে সাহীদ পূর্বকোণকে বলেন, মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।

 

পাউবো সূত্র জানায়, অভিযান চালিয়ে ১১৭ একর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। ওই মৌজায় প্রতি শতক জমি ১০-১১ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়। গড়ে ১০ লাখ টাকা করে হলেও উদ্ধার করা জমির মূল্য দাঁড়ায় ১১৭০ কোটি টাকা।

 

এদিকে, জমি উদ্ধারের পর থেকে লিজ দেওয়ার নামে দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে দালালচক্রের সদস্যরা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুটি চক্র জমি লিজ নিয়ে দেওয়ার নামে বিভিন্ন দখলদার ও নতুন লিজ পেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট