
গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে মানি লন্ডারিং ও মাদক পাচারের মামলার কথা বলে নগরীর দুই চিকিৎসকের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র। প্রতারকদের কথামতো ব্যাংক ও বিকাশে এসব টাকা লেনদেন করেছেন তারা। এ ব্যাপারে ডবলমুরিং থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন ঘটনার শিকার দুই চিকিৎসক।
নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, পণ্য বিক্রি ও নানা লোভনীয় অফারে প্রতারণার ঘটনায় আমাদের কাছে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাগুলো তদন্তের জন্য আদেশ দিয়েছেন। তবে ডিবি পরিচয়ে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে- এ ধরনের মামলা আমরা পাইনি। এ ধরনের প্রতারণা নতুন।
কেস স্টাডি-১: চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শান্তনু দাশের কাছে গত ১৫ জুলাই এক ব্যক্তি ফোন করেন। তিনি নিজেকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের এসআই জোনায়েদ পরিচয় দিয়ে ডা. শান্তনুকে বলেন, আমরা আলম গাজী নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, আপনার ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট ব্যবহার করে ৩৭ লাখ টাকা অন্য একাউন্টে লেনদেন করেছে। আপনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। আপনাকে যেকোন মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হবে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝানোর জন্য ঢাকা ডিবি অফিসের জনৈক এসপি মহসিন আপনাকে ফোন দেবে- এ কথা বলার পর তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
কিছুক্ষণ পর ০১৯১১-৮১১৪২১ নম্বরের টেলিগ্রাম থেকে ডা. শান্তনুর টেলিগ্রাম নম্বরে ফোন করে নিজেকে এসপি মহসিন পরিচয় দিয়ে প্রথমে এসআই জোনায়েদের কথাগুলো বলেন। এরপর বলেন, আপনাকে গ্রেপ্তার করার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে। উত্তরে ডা. শান্তনু বলেন, আমি একজন চিকিৎসক। টাকা পাচারের কোন ধরনের ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। কেউ আমার কাছ থেকে টাকাও পাবে না। এ কথা শোনার পর এসপি মহসিন পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তি অনেকটা হুমকির সুরে বলেন, বিষয়টি আপনার পরিবারকে জানানো হবে। আপনাকে যেকোন সময় গ্রেপ্তার করা হবে। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে রোমানা আক্তার রিয়া, প্রাইম ব্যাংক কুমিল্লা শাখার ২১৫৮২১৭০১৯০৪৬ হিসাবে ১০ লাখ টাকা দিতে বলেন। ওই হিসাব নম্বরে প্রথমে ৩০ হাজার, এরপর ২ লাখ ৮৩ হাজার ও বিকাশ নম্বর থেকে ছয় হাজার টাকাসহ সবমিলিয়ে তিন লাখ ১৯ হাজার টাকা পাঠান ডা. শান্তনু। পরে এসআই জোনায়েদ ও এসপি পরিচয় দেয়া মহসিনের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ডা. শান্তনু বাদী হয়ে গত ১৫ জুলাই নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
কেস স্টাডি-২: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন সাজিদের কাছে চারটি মুঠোফোন নম্বর থেকে পর পর ফোন করে এক ব্যক্তি নিজেকে ঢাকা ডিবি অফিসের এসপি মহসিন পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আপনার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা আছে। ৩৬ লাখ টাকা পাচারের অপরাধে এক ব্যক্তি আপনাকে অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করেছে। মামলাটি কুমিল্লা ডিবি অফিস থেকে ঢাকা ডিবি অফিসে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাকে ডা. শান্তনুর মতো একই ধরনের কথা বলা হয়। পরে এসপি মহিসন পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তির দেয়া পূবালী ব্যাংকের ৪৯২৪৯০১০১৪৪৬২ হিসাব নম্বরে দফায় দফায় দুই লাখ টাকা পাঠানো হয়। এরপর ওই ব্যক্তি ০১৭৮২-০৯৬২৯২ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন সাজিদ বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (ওসি) বাবুল আজাদ জানান, ডিবি পরিচয়ে দুই চিকিৎসকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দুই চিকিৎসক থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
পূর্বকোণ/ইবনুর