চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশ সরবরাহ কম, দামও চড়া
গতকাল জোয়ারের সময় রানি রাসমনি ঘাটে নৌকা থেকে মাছ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা

ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশ সরবরাহ কম, দামও চড়া

মোহাম্মদ আলী

২৬ জুলাই, ২০২৫ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী সাগর পাড় এলাকায় রাসমনি ঘাটের অবস্থান। এটি বেসরকারিভাবে তৈরি করা একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। সাগর থেকে মাছ আহরণ করে ফিশিং বোটের জেলেরা এ ঘাটে পাইকারি দরে বিক্রি করে। এ ঘাটে প্রতিদিন পাইকারি মাছ নিলামে বিক্রি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর থাকে। তবে ইলিশ মৌসুম আসলে ক্রেতা-বিক্রেতার পদভারে বাজারটি আরো সরগরম হয়ে ওঠে। কিন্তু এ বছর ভরা মৌসুমেও এ ঘাটে ইলিশ আসছে কম। জেলেদের জালে ইলিশ কম পড়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।

 

ইতোমধ্যে কিছু কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও জাটকা সাইজের পাওয়া যাচ্ছে বেশি। ওজনে প্রতি কেজিতে ইলিশ ধরছে ৫ থেকে ৭টি। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম হলেও যেসব ইলিশ ওজনে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ওপরে সেগুলোর দামও আকাশছোঁয়া। এটি শুধু নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাটের চিত্র নয়, চট্টগ্রামের সবগুলো পাইকারি বাজারের চিত্র।

 

বিক্রেতারা বলছেন, এতদিন বৈরি আবহাওয়ার কারণে বেশিভাগ জেলে সমুদ্রে যেতে পারেনি। তাই বাজারে ইলিশ সরবরাহ খুবই কম ছিল। এখন আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলেও সাগরে ইলিশ মিলছে কম। তাই বাজারে ইলিশের দামও আকাশছোঁয়া। দাম দেখে অনেকেই ইলিশ না কিনেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

 

নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাটের আড়তদার মো. নুর নবী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও এখনো ইলিশ ধরা পড়ছে কম। তাই দাম খুব একটা কমছে না। তবে বর্তমানে এ ঘাটে কিছু কিছু ইলিশ আসছে। তা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ধীরে ধীরে ইলিশের দাম কমছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম কিছুটা কমবে।

 

প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম ধরা হয়। তবে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে এ সময়ে ইলিশের দেখা মিললেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। বিশেষ করে বড় সাইজের ইলিশের পরিমাণ তুলনামূলক খুব কম পাওয়া যাচ্ছে।

 

বাজারে ৫ থেকে ৬টি ছোট মাছ মিলে এক কেজি হয় এমন ইলিশ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশই এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, যার দাম এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এ সাইজের ইলিশ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা। ওজনে এক কেজির বেশি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। গতকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, কাজীর দেউড়ি, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

 

এদিকে ইলিশের অতি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। ফিরিঙ্গিবাজার ফিসারিঘাট বাজার হচ্ছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার, যেখান থেকে বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। একই অবস্থা দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি হাটের অবস্থা। সেখানেও ইলিশের দাম এখনো তেমন একটা কমেনি।

 

দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি। এ সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ আসার কথা, তার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। চাহিদা বেশি থাকায় দামও চড়া। তবে গত দুই দিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, বর্তমানে ইলিশের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি। এতদিন বৈরি আবহাওয়ার কারণে বেশিরভাগ জেলে ঠিক সময়ে সমুদ্রে যেতে পারেননি, ফলে সরবরাহ কম ছিল। তবে এখন আবহাওয়া তুলনামূলক ভাল। জেলেরাও মাছ মারতে সাগরে যাচ্ছে। তাই বাজারে ইলিশ আসার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও কমতে শুরু করেছে।

 

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৭ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ উৎপাদন হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন, যা এর আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় ৪ হাজার ৭৪৯ মেট্রিক টন বেশি। ওই অর্থ বছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ মেট্রিক টন। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে বাংলাদেশ। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। ইলিশ মাছ রপ্তানি করে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট