চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

এবার চোখ রাঙাচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা
ফাইল ছবি

এবার চোখ রাঙাচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুলাই, ২০২৫ | ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু ও জিকার সঙ্গে নতুন করে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জার দাপট। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাম্প্রতিক জরিপ মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষাকৃত রোগীদের অর্ধেকের বেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত।

 

প্রতিষ্ঠানটির এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, ল্যাবরেটরিতে আসা নমুনার মধ্যে প্রি-সাসপেক্টেড ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগীর হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শনাক্ত হয়েছে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা এ/এইচ৩’ ভাইরাস। যা শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে রয়েছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টিকে ‘ফ্লু মৌসুম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে জুন ও জুলাইতে এর প্রকোপ সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এ সময়টিতে ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যায়।

 

এই প্রেক্ষাপটে মাঠ পর্যায়ে সতর্কতা বাড়াতে আইইডিসিআর ৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, গুরুতর ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের প্রাধান্য, হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা।

 

আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স হতে প্রাপ্ত ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুমের (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলমান মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগীর হার ৫০ শতাংশের অধিক যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের এই প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করা হলো।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দীন চৌধুরী বলেন, জ্বর-কাশি নিয়ে আসা অধিকাংশ রোগী ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। যাদের আগে থেকেই অসুস্থতা রয়েছে, তাদের শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

 

শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, সাধারণ জ্বর থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্রুত জটিল হয়ে যায়। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসা জরুরি।

 

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ সম্প্রতি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছি। হাসপাতালে ওষুধ, অক্সিজেন, সেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়ার অভ্যাস এবং অসুস্থ ব্যক্তিকে আলাদা রাখার মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

গবেষকরা বলছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রতিরোধী টিকা নেওয়া উচিত। তাঁদের মতে, প্রতি বছর টিকা গ্রহণ করলে শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী এন্টিবডি তৈরি হয়। যা ফ্লু মৌসুমে সংক্রমণ রোধে কার্যকর। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকার আওতায় আনা জরুরি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট