
উক্যছাইং মারমার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। ভালো মানুষ হবে। দেশের জন্য কিছু করবে। সেই আশায় ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল। আর এখন চিরতরেই হারিয়েই গেল সে।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল বান্দরবানের স্কুলছাত্র উক্যছাইং মারমা।
সোমবার রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বলে জানান নিহত উক্যছাইং মারমার খালা মেমে সাইন মারমা।
মেমে সাইন মারমা বলেন, বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বান্দরবান থেকে ঢাকায় ছুটে যান উক্যছাইংয়ের বাবা-মা দুজনই। সোমবার রাত ১০টার দিকে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। শেষবারের মতো ছেলের পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের চোখের সামনেই ধীরে ধীরে নিভে যায় তাদের একমাত্র সন্তানের স্বপ্নের আলো।
উক্যছাইং মারমা রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক উসাই মং মারমা এবং মা ডেজিপ্রু মারমাও বান্দরবানে রুমা উপজেলার ক্যকতাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। নিহত উক্যছাইং মারমা তাদের একমাত্র সন্তান।
উক্যছাইং মারমার জেঠা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের কর্মকর্তা থুইসাচিং মারমা জানান, বড় হয়ে সেনা কর্মকর্তা হওয়ার জন্য এ বছর ক্যাডেট পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল সে। কিন্তু টিকেনি। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী উক্যছাইং মারমা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করে আসছিল। ছেলের লেখাপড়া ভাল করার জন্য তাকে বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল। যার কারণে বান্দরবান শহরে বালাঘাটা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিল পরিবার। এখনও সেই ভাড়া বাসা আছে।
‘পরে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করা হয় তাকে। এখন দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।’
নিহত উক্যসাইনের গ্রামের বাড়ি রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গাল হালিয়া এলাকায়। এটি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক এলাকায়।
থুইসাচিং মারমা মঙ্গলবার বিকালে বলেন, ‘ঢাকা থেকে মরদেহ নিয়ে আসা হচ্ছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যে হয়ত পৌঁছে যাবে। মরদেহ বাঙ্গাল হালিয়ায় খ্যাংদং পাড়ায় রাখা হবে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে হেডম্যান পাড়া এলাকায় কেন্দ্রীয় মারমা শশ্মানে সমাহিত করা হবে।’
সোমবার দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়ির এই স্কুলের ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই বিমান আছড়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, স্কুলের মাঠে বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানটি ছেঁচড়ে গিয়ে ধাক্কা খায় দোতলা হায়দার আলী ভবনে। অগ্নিগোলকে পরিণত হওয়া সেই বিমানের শিখা স্কুল ভবনটিকেও গ্রাস করে নেয়।
তখন স্কুল ছুটির সময়, অনেক অভিভাবকও ভিড় করেছিলেন ভবনটির কাছে। দুর্ঘটনার পর ভবনের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বের হতে পারছিলেন না কেউ।
উদ্ধার অভিযান শেষে জঙ্গি বিমানের পাইলটসহ ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৭১ জনকে ওই ভবন থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তাদের অধিকাংশই মারাত্মকভাবে দগ্ধ, আর বেশিরভাগই শিশু।
আহতদের মধ্যে আরো দশজন রাতে হাসপাতালে মারা গেলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৭ জন। এখনো ৭৮ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতদের মধ্যে ২০ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলেও ছয়জনের মরদেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে সেগুলো আর চেনার উপায় নেই।
বান্দরবানেও শোকের ছায়া
উ ক্য সাইনের মৃত্যুতে বান্দরবানসহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজবিলা ইউনিয়ন, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সহপাঠী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তার পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিহত শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হচ্ছে। নিউজ: বিডিনিউজ২৪
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ