চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

সরকারি জমি বিক্রিতে জালিয়াতি খতিয়ান-নথিতে ঘষামাজা
সরকারি সম্পত্তি জালিয়াতির বিষয়ে আগ্রাবাদ সার্কেল ভূমি অফিসের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করছেন দুদক কর্মকর্তাবৃন্দ

সরকারি জমি বিক্রিতে জালিয়াতি খতিয়ান-নথিতে ঘষামাজা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ জুলাই, ২০২৫ | ৩:৪৬ অপরাহ্ণ

নগরীর রামপুর মৌজার একটি সরকারি জমি। যার আয়তনে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৮ একর। ১৯৭১ সালের পর এ জমি ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ হিসেবে সরকারের দখলে থাকলেও, বছরের পর বছর সেটি ভোগদখলে রেখেছেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। কাগজপত্রে তার মালিকানা দৃশ্যমান হলেও, জমির প্রকৃত ইতিহাস বলছে-সেটি সরকারি সম্পত্তি।

 

সাধারণত, সরকারি সম্পত্তি সহজে কেনাবেচার সুযোগ নেই। ক্ষেত্র বিশেষে দরকার হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও। কিন্তু এই জমি হাতবদল হয়েছে তিনবার! তাও আবার ভূমি অফিসের নথি ঘষামাজা করে, সরকারি খাতায় ‘পরিত্যক্ত’কে বানানো হয়েছে ‘অর্পিত’ সম্পত্তি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ওঠে এসেছে ভূমি অফিসের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

 

গতকাল রবিবার দুপুরে আগ্রাবাদ সার্কেল ভূমি অফিসে অভিযান চালায় দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. সাঈদ ইমরানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে ভূমি অফিস থেকে জালিয়াতি সংশ্লিষ্ট একাধিক নথিপত্র জব্দ করেন দুদক সদস্যরা। জমির শ্রেণি পরিবর্তন, জাল খতিয়ান তৈরি, ভুয়া ওয়ারিশ সনদ এবং সরকারি জমি আত্মসাত-এই পুরো প্রক্রিয়ায় ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে অভিযানে।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, জমিটি ১৯৬৪ সালে কিনেছিল মেসার্স আশরাফ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় কোম্পানির মালিক পাকিস্তানে চলে গেলে জমিটি স্বাভাবিকভাবেই সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। সে অনুযায়ী ১৫৩ ও ৭১০ নম্বর খতিয়ানে জমিটি সরকারের নামে রেকর্ড হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই খতিয়ানেই চলে আসে ব্যক্তির নাম। তাও আবার ভূমি অফিসের নিবন্ধন খাতায় ঘষামাজা করে, পরিত্যক্ত জমিকে অর্পিত দেখিয়ে। অথচ খতিয়ান সংশোধন বা শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হয় সহকারী কমিশনার (ভূমি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বা জেলা প্রশাসকের অনুমোদন। এখানে তেমন কোনো সই বা অনুমোদনের প্রমাণ মেলেনি।

 

দুদক জানায়, নিয়ম অনুযায়ী, কোনো জমি ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত হলে সেটি বিক্রির সুযোগ থাকে নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আর পরিত্যক্ত সম্পত্তি বিক্রি বা ব্যক্তির নামে নামজারি করার সুযোগ নেই, যতক্ষণ না সরকার নিজেই সে জমি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ভূমি অফিসের লোকজন দ্বারাই জালিয়াতি করা হয় এই জমির ক্ষেত্রে।

 

ভূমি অফিস ও দুদক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ওই জমির খাজনা দিতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সংশ্লিষ্ট দাগ ও খতিয়ান ধরে কাগজ যাচাই করে দেখা যায়, নামজারির খতিয়ানে কোথাও নেই কোনো সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর। অথচ সম্পত্তির মালিকানা চালু আছে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করে ভূমি অফিস। যদিও জমির এ মালিকানা নিয়ে এর আগেও একাধিকবার তদন্ত হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে সেটি চেপে রাখা হয়েছিল এতদন। সর্বশেষ দুদকের নজরেও এসেছে এ জালিয়াতির তথ্য। অভিযানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।

 

অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাঈদ ইমরান বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। খুব শিগগিরই কমিশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা আরও বলেন, একজনের নামে নামজারির আবেদন করা হলেও খতিয়ান তৈরি হয়েছে অন্যজনের নামে। বিএস জরিপে সরকারিভাবে রেকর্ড থাকা জমির মালিকানা বদলে গিয়ে চলে গেছে ব্যক্তির নামে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট