চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

মেলা নয়, খোয়া যাওয়া মুঠো ফোনের খোঁজে ভিড়
ডিবি পুলিশের উদ্ধারকৃত হারানো মোবাইল খোঁজে ব্যস্ত মালিকরা

মেলা নয়, খোয়া যাওয়া মুঠো ফোনের খোঁজে ভিড়

নাজিম মুহাম্মদ

২১ জুলাই, ২০২৫ | ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় হাজারো নারী পুরুষ। দেখে মনে হবে কোন মেলা বা অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দীর্ঘ লাইন ধরেছে তারা। কিন্তু তা নয়। নিজেদের হারানো কিংবা ডিবি হওয়া মুঠোফোনের খুঁজে তারা নগরীর মনসুরাবাদ নগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে (ডিবি) লাইন ধরে প্রবেশ করছিল।

 

গতকাল রবিবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। ডিবি পুলিশ যে পরিমাণ মুঠোফোন উদ্ধার করেছে তার চেয়ে তিনগুন বেশি নারী-পুরুষ ভিড় করেছে। ভেতরে টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে উদ্ধার করা মুঠোফোনগুলো। যেন মুঠোফোন কোম্পানির মেলা বসেছে। তবে ভাগ্যবান ১৭ জনের মুঠোফোনের আইইএমই নম্বর (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) মিলেছে। তারা ফোন ফেরত পেতে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করেছেন।

 

 

নগরীর কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন হরিশদত্ত লেনের জনৈক সোহেলের বাসায় গত ১০ জুলাই রাতে অভিযান চালায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি ও ছিনতাই হওয়া ৩৪২টি মোবাইল ফোন, ছয়টি পুরাতন ল্যাপটপ ও দুই লক্ষ টাকা। প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিতে মুঠোফোনগুলোর আইইএমই নম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। এতে উদ্ধার হওয়া মুঠোফোনের তিনগুন মানুষ ভিড় করেছে নগরীর মনসুরাবাদ ডিবি অফিসে। যাদের প্রত্যেকের মুঠোফোন হারিয়েছে অথবা চুরি, ছিনতাই হয়েছে।

 

নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানান, আমরা মোট মোবাইল উদ্ধার করেছি ৩৪২টি। এরমধ্যে বিভিন্ন মডেলের আইফোন ৫৬টি বাকি ২৮৬টি এনড্রয়েট ফোন। এরমধ্যে ১০০ এনড্রয়েট ফোন ও অধিকাংশ আইফোন লক করা।

 

ডিসি মাহবুব বলেন, ৩৪২ মুঠোফোনের মধ্যে কিছু মুঠোফোনের আইইএমই নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে। যেসব মুঠোফোনের আইইএমই নম্বর শনাক্ত করতে পারিনি সেগুলো সাধারণ মানুষের জ্ঞাতার্থে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছি। এরমধ্যে ১৭টি মুঠোফোন আইএইএম নম্বরের মিলে যাওয়ায় ফোনগুলো ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট মালিকরা বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করেছেন। গত শনিবার আই ফোন এবং গতকাল রবিবার এনড্রয়েড ফোনগুলো আমরা সাধারণ মানুষকে দেখানোর ব্যবস্থা করি। আমরা চেষ্টা করছি আইইএমআই নম্বর মিলিয়ে সঠিক মালিকের কাছে মুঠোফোনগুলো ফেরত দিতে।

 

গত ১০ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরিচালিত এ অভিযানের সময় চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে সোহেলের বাসা থেকে বিভিন্ন মডেলের ব্যবহৃত ৩৪২টি মোবাইল ফোন, ছয়টি পুরাতন ব্যবহৃত ল্যাপটপ এবং দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ সময় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হল, মো. তানভির হাসনাইন (৩২), মো. সোহেল উদ্দিন (৩২), মো. রুবেল প্রকাশ চাকমা রুবেল (৩৬), মোহাম্মদ হোসাইন (২২) ও আবদুল্লাহ আল মামুন (২৭)।

 

গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানান, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি চক্র সাধারন মানুষের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ও বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রগুলো সাধারণত ভিড়ের মধ্যে বা জনসমাগমস্থলে বেশি সক্রিয় থাকে। এরা যাত্রীবেশী হয়ে বা সাধারণ মানুষের মতো মিশে গিয়েও এই কাজ করে থাকে। উদ্ধার করা মুঠোফোনের সবগুলো ব্যবহৃত। ধারণা করা হচ্ছে এসব মুঠোফোন চুরি কিংবা ছিনতাই করা।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট