দীর্ঘ ১৬ বছর পর এবার মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এবার রমজানে ইফতার মাহফিল নিয়ে বেশ সক্রিয় ছিল দল দুইটি। ইফতার আয়োজনের পর এবার তারা কোন ধরনের আতঙ্ক-উদ্বেগ ছাড়া এবং নির্ভয়ে নেতাকর্মীরা ঈদ উদযাপন করবেন। এমন কি ঈদকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে যার যার সংসদীয় আসনে সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে জনসংযোগ করবেন দুই রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ইতোমধ্যে এলাকায় নেতাদের আনাগোনা বাড়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মাঝে অন্য রকম আমেজ বিরাজ করছে।
চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন ১৬টি। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচন সামনে রেখে এসব আসনে বিএনপির অর্ধশতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন। অপরদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে জামায়াতে ইসলামী সবার আগে তাদের একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে চাঙা হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক অঙ্গন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিন ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে হাজার হাজার মামলার শিকার হয়েছেন। জেলে গেছেন বহুবার। নিহত হয়েছেন দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী। এমন কি আমি নিজেও ১০২টি মামলার শিকার হয়েছি। জেলে যেতে হয়েছে তিনবার। অসংখ্য মামলার কারণে আত্মগোপনেও থাকতে হয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে আমাদের বাসায়ও বহুবার হামলা-ভাংচুরও হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে আমার গাড়িও। এ কারণে সারাবছরই আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হতো। কখন গ্রেপ্তার করতে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন কি ঈদের সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে চাইলে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দিতে চাইতো না অনেকে। কিন্তু দীর্ঘদিন পর এবার সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়া ভিন্ন এক আমেজে এবার ঈদ উদযাপন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আগে ঈদ আসলে বিএনপি নেতাকর্মীরা আতঙ্কের মধ্যে থাকতেন। কখন গ্রেপ্তার হন কিংবা কখন বাসায় পুলিশ এসে পরিবারের সদস্যদের নাজেহাল করেন- এ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সীমা থাকতো না। কিন্তু এবার অন্য রকম পরিবেশে মুক্তভাবে ঈদ পালন করতে পারবো।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ এরশাদ উল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, গত ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মামলার কারণে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত দৌড়ের মধ্যে থাকতে হয়েছে। ঈদ-কোরবান এলেই বিরাজ করতো এক ধরনের আতঙ্ক। কখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বাসায় এসে ধরপাকড় চালায়। কিন্তু এবার সেই দীর্ঘ ১৭ বছরের পরিস্থিতি আর নেই। গত ৫ আগস্ট দেশের পট-পরিবর্তনের পর এবার ভিন্ন আমেজে ঈদ করবেন দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে আলহাজ এরশাদ উল্লাহর মতো একই কথা বলেছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীরা অসংখ্য মামলার শিকার হয়েছেন। বাসাবাড়িতে থাকতে পারেননি। সারাক্ষণ দৌড়ের মধ্যে থাকতে হয়েছে। পট-পরিবর্তনের পর এবার শুধু বিএনপি নয়, দেশবাসীও স্বস্তির সাথে ভিন্ন আমেজে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অসংখ্য মামলার শিকার হয়েছেন। জেল কেটেছেন বহুবার। বিগত ১৭ বছর আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এবার সেই প্রেক্ষাপট নেই। দীর্ঘদিন পর বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার নির্ভয়ে ঈদ উদযাপন করবেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন বলেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে গোটা জাতি দীর্ঘদিন পর প্রভুত্বমূলক পারিবারিক রাজনৈতিক জমিদারি থেকে মুক্তি পেয়েছে। ১৭ বছর ধরে গুম, খুন, মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার, জেল গেট থেকে পুনঃগ্রেপ্তার, জামিন না মঞ্জুর, আটকে রেখে নির্যাতন, নেতাকর্মীদের স্বজনদের হয়রানি এসব চলেছে। তাই ঈদের আনন্দের মধ্যেও বনে জঙ্গলে ঘুরতে হয়েছে সবাইকে, ধান ক্ষেতে রাত কাটাতে হয়েছে। আমরা গণমানুষের রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের কাছে যেতে পারতাম না, এটা ছিল খুবই বেদনার। তবে এবার গোটা জাতির মুক্তির আনন্দে প্রথম ঈদ উদযাপন হচ্ছে এবার। এবার জনগণের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি আমরা। তাই মাঠ পর্যায়ের কর্মী থেকে কেন্দ্রীয় নেতা- সবাই উচ্ছ্বাসিত। সবাই জনগণের কাছে গিয়ে খেদমত করার সুযোগ পেয়েছে, তাই আনন্দিত। মুক্ত আকাশে এই ঈদের জন্য আল্লাহ’র কাছে শোকরিয়া ও গোটা জাতিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।