স্যুয়ারেজ নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার আরো একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভায় এটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত প্রকল্পটি হচ্ছে- নগরীর কালুরঘাট এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। এটির অধীনে ৭৪ দশমিক ১১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এজন্য সরকারের মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ১৫৫ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, ওয়াসার স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় পুরো চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। প্রণীত প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জোন-১ এর কাজ শুরু করে ওয়াসা। এরপর অন্য ৫টি ক্যাচমেন্টের মধ্যে ২ ও ৪ নিয়ে আরো একটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প তৈরি করে সরকারি সেবা সংস্থাটি। নগরীর কালুরঘাটের হামিদচর এলাকায় প্রকল্পের মূল স্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। এটির দৈনিক ধারণ ক্ষমতা হবে ৬০ হাজার ঘন মিটার।
এছাড়া প্রকল্পের অধীনে প্রধান স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে ১১ কিলোমিটার, শাখা স্যুয়ারেজ লাইন ৭০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস লাইন হবে ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৯৩২টি ম্যানহোল এবং গৃহ সংযোগ ও ক্যাচপিট নির্মাণ হবে ১৪ হাজার করে। এ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসা যৌথভাবে প্রকল্পের অর্থায়ন করবে।
এদিকে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর একনেক অনুমোদনের দিন প্রকল্পটি নিয়ে জাইকার সাথে ঋণ এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের অধীনে আগে থেকে কোন জমি অধিগ্রহণ করা ছিল না। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণের জন্য নেওয়া নতুন একটি প্রকল্প। চট্টগ্রাম মহানগরীর কালুরঘাট এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। প্রকল্পের অধীনে নগরীর কালুরঘাট এলাকার হামিদচর থেকে ৭৪ দশমিক ১১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে দুই হাজার ১৫৫ কোটি টাকা।
অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে বাস্তবায়ন করা হবে ‘চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪)’ প্রকল্পের পয়ঃশোধনাগার। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নগরীর কালুরঘাট, মোহরা, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, চকবাজার, বাকলিয়া, আন্দরকিল্লা, দেওয়ানবাজার, ফিরিঙ্গিবাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ। ২০২৭ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রায় ১৮ লাখ মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নত হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ওয়াসার স্যুয়ারেজের ক্যাচমেন্ট ২ ও ৪ নিয়ে একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদনের পর এটি ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে আরো একটি প্রকল্প তৈরি হয়। প্রকল্পটি ২৩ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়।
নগরীর কালুরঘাট এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, প্রকল্পটির অধীনে ৭৪ দশমিক ১১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এজন্য সরকারের মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। ২০২৭ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রায় ১৮ লাখ নগরবাসীর জীবনযাপনের মান উন্নত হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ওয়াসার স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় পুরো চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। এরপর অন্য ৫টি ক্যাচমেন্টের মধ্যে ২ ও ৪ নিয়ে আরো একটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। ওই প্রকল্পের অধীনে নগরীর কালুরঘাটের হামিদচর এলাকায় মূল স্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জায়গা অধিগ্রহণের জন্য আরো একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রণীত প্রকল্পটি ২৩ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়। এ নিয়ে গত তিনমাসে একনেক সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার তিনটি বড় প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব