ঢাকার যেমন চকবাজার, গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া, কলকাতার বড়বাজার, দিল্লির চাঁদনীচক, লাহোরের আনারকলি বাজার, চট্টগ্রামের তেমনই রিয়াজউদ্দিন বাজার। নগর জুড়ে চকচকে মল, সুপার মার্কেট, শপিং প্লাজার রমরমার মধ্যেও সাশ্রয়ী মূল্যে কেনাকাটার জন্য চট্টগ্রামের মানুষের ভরসা রিয়াজউদ্দিন বাজার।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঈদের কেনাকাটা করতে যাওয়া নারী-পুরুষের ভিড়। সন্তানকে নিয়ে বাজারে এসেছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েকবছর ধরে পরিবারের ঈদের বাজার করছি, এখান থেকে। ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনব। যেখানে বিভিন্ন শপিংমলে সর্বনিম্ন দুই থেকে তিনহাজার টাকায় যে পাঞ্জাবি বিক্রি হয় সেখানে রিয়াজউদ্দিন বাজারে সাতশো থেকে এক হাজারে মেলে।
রিয়াজউদ্দিন বাজার, শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী ও ব্যস্ততম বিপণীকেন্দ্র, যা ঈদ উপলক্ষে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। নিউমার্কেট ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এই বাজারের নামকরণ করা হয়েছে নোয়াখালী অঞ্চলের প্রথম গ্র্যাজুয়েট শেখ রিয়াজউদ্দিন আহমদ সিদ্দিকীর নামে, যিনি ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিকে এ বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত, যা উত্তরে এনায়েতবাজার, দক্ষিণে স্টেশন রোড, পূর্বে জুবিলী রোড এবং পশ্চিমে বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিশাল এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক মার্কেটে ১০ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে, যেখানে সব ধরনের পণ্যসামগ্রী পাওয়া যায়।
রমজানে রিয়াজউদ্দিন বাজারে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বেড়ে যায়। সকাল থেকে সেহেরির আগ পর্যন্ত নানা বয়সী ক্রেতারা ভিড় জমান। বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানে নিত্যনতুন ডিজাইনের শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতো, কামিজ, বোরকা, ফ্রক, লেহেঙ্গা, পাজামা, লুঙ্গি ইত্যাদি পণ্যের সমাহার দেখা যায়।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সব শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য পণ্য মিলে। এখানে কম দামি থেকে শুরু করে বেশি দামি সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়, যা মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়। রিয়াজউদ্দিন বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা বাজারের পণ্যের বৈচিত্র্য ও দরকষাকষির সুযোগের কারণে সন্তুষ্ট। অনেকেই পরিবার নিয়ে আসেন, বিশেষ করে যারা সীমিত আয়ের মধ্যে সবার জন্য পোশাক কিনতে চান।
তামাকুমণ্ডি লেন বণিক সমিতির সভাপতি সওয়ার কামাল জানান, ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে বাড়ানো হয়েছে বাড়তি পুলিশ। পাশাপাশি রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা প্রহরী। পুরো বাজারজুড়ে বসানো হয়েছে ৬০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। বাজারের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে ফুটপাত ও সড়কজুড়ে হকারদের অবস্থানের কারণে মার্কেটে আসা ক্রেতাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। হকারদের পণ্যের পসরা সাজানোর কারণে অনেক গলিই সংকীর্ণ হয়ে যায়, যা ক্রেতাদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নারী ক্রেতাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। এছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতও রয়েছে, যা বাজারের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
পূর্বকোণ/ইব