বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এখন অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশার দখলে। বেপরোয়া গতিতে চলা ব্যাটারি চালিত এসব রিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর অলিগলিসহ প্রধান প্রধান সড়কগুলি। সন্ধ্যা হওয়ার পরপরই ব্যাটারি চালিত রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় বিদ্যুৎ গতিতে। নিয়ন্ত্রণহীন এই ব্যাটারি চালিত রিকশায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল দিনদিন যেন বেড়েই চলেছে। এসব যানের নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
মাসখানেক আগেও সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে এসব ব্যাটারিচালিত গাড়ির সংখ্যা বাড়ত। তবে এখন দিনদুপুরেও এশিয়ান হাইওয়েসহ সব সড়কেই এই ভয়ঙ্কর যানের চলাচল বাড়লেও নেই কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে পুলিশ অভিযান চালালেও কমছে না ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম।
বিপজ্জনক উল্লেখ করে বিভিন্ন সময় সামাজিক এবং নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের দাবি তুললেও তা কমছে না, বরঞ্চ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
নাগরিক সমাজের অভিযোগ, নগরীর প্রধান প্রধান সড়কেও বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। দিন রাত এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে সমানতালে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন এই বাহনে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে হতাহতের ঝুঁকিও।
শুধু তাই নয়, আইনের তোয়াক্কা না করেই চট্টগ্রাম নগরীতে দিন দিন বেড়েই চলছে ভয়ঙ্কর এই ব্যাটারিচালিত বাহনটি। এতে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নগরীর চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালী, কাজির দেউড়ি, নিউমার্কেট, টাইগারপাস, আকবর শাহ, অলঙ্কার, ফ্রিপোর্টসহ বেশ কিছু এলাকায় ওইসব রিকশার বেশ কয়েকটি গ্যারেজ রয়েছে। ওইসব গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে ওই রিকশাগুলির ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়।
যার কারণে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের বিশাল প্রভাব পড়ছে। লোডশেডিং এর অন্যতম কারণ হিসেবেও দেখছেন বোদ্ধামহল। আতঙ্কের বিষয়, বেশিরভাগ চালকের নেই কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা। অদক্ষ চালক অনেক সময় রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
তাছাড়া, এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে সড়কে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়। যার ফলে কর্মজীবী নাগরিকদের শত শত কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অধিকাংশ এই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছে শিশু-কিশোর এবং অন্য পেশা থেকে আসা শ্রমিকরা। এসব চালকদের বেপরোয়া ও বিশৃঙ্খলভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া মাদকাসক্ত ভবঘুরে এমন বহু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ যুবকরা সন্ধ্যা হলেই ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
তাছাড়া, ভয়াবহ ব্যাপার হলো, এসব রিকশা চালকরা দুই পা উপরে তুলে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। যার ফলে তাদের পক্ষে রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে আবার প্রতিবন্ধী সেজে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে।
এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কোন সময় কোন দিকে টার্ন নিতে হবে, কোন সময় রিকশার গতি কমাতে হবে, বাড়াতে হবে এবং ব্রেক করতে হবে, কিছুই জানেন না এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। মূহূর্তেই গতি বাড়ানো, টার্ন নেয়া, ব্রেক কিংবা গতি কমানো যেন তাদের গাড়ি চালানোর অন্যতম স্টাইল। এভাবে চালাতে গিয়ে এসব চালকেরা প্রতিমুহূর্তে ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। কাউকে মেরে দিচ্ছেন পেছন থেকে, আবার কাউকে সামনে থেক, কাউকে বা মারছেন পাশ থেকে। তাদের চালানো দেখলে মনে হয়, যেন রাস্তায় কাবাডি খেলছেন।
নগরীতে ঘুরে দেখা যায়, নিষিদ্ধ ব্যাটারি রিকশায় সয়লাব চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিসহ মূল সড়ক। অবৈধ এসব রিকশা চলাচল করতে দেখলেও পুলিশ যেন নির্বিকার। যার কারণে ভয়ঙ্কর এই বাহনগুলোর চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার,২ নম্বর গেট, অক্সিজেন, মুরাদপুর, জিইসি, ওয়াসা, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্যাডেল রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি লাগিয়েও বানানো হয়েছে এসব যান। এলাকায় এলাকায় মোড় দখল করে নিয়েছে ওই ভয়ঙ্কর বাহনটি। রাতে অন্যান্য গাড়ির চাপ কমে গেলে ব্যাটারিচালিত এসব রিকশা নামতে থাকে। চলতে থাকে সকল রোডেই।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যবসা করে যাচ্ছেন। যা নগরীর অলিগলি এমনকি প্রধান প্রধান সড়কে যাত্রী বহন করে চলছে। আর প্যাডেল চালিত রিকশার চেয়ে এর গতি অনেক বেশি এবং চালকরা অপেশাদার হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এতে অনেক পরিবার হয়েছেন ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বার বার নিষিদ্ধের কথা বলা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং দিন দিন এসব যানের সংখ্যা বাড়ছেই। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরী এই অবৈধ রিকশার দখলে চলে গেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না।
অদক্ষতার কারণে কখনো চালক কখনোবা পথচারী শিকার হন দুর্ঘটনার। তাছাড়া এসব যানে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ। এভাবে কয়েক হাজার ব্যাটারি চার্জ দেয়া হচ্ছে গ্যারেজে। এতে একদিকে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যাটারি রিকশার মালিকরা।
এসব ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে শোরগোল উঠলে ট্রাফিক পুলিশ নিবন্ধনহীন এসব রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বোপরি, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে, যাত্রী সাধারণের যাত্রা নিরাপদ করতে এবং জানমাল রক্ষার্থে ভয়ঙ্কর এসব অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা দ্রুত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
লেখক: সংগঠক, কলামিস্ট
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ