নগরীর লালদিঘি এলাকার পশ্চিম পাশে আদালত ভবনের পাদদেশে অবস্থিত জহুর হকার্স মার্কেট দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প ও মধ্যমআয়ের মানুষের জন্য ঈদের কেনাকাটার প্রধান গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিচিত।
মার্কেটটি সাশ্রয়ী দামের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়, যেখানে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ কম খরচে মানসম্মত পোশাক ও অন্যান্য পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এখানে কেনাকাটায় সারাবছরই থাকে ক্রেতার ভিড়। ঈদ আসলেই আরও জমে ওঠে এই মার্কেট। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। সেই ঐতিহ্য বজায় থাকলেও বদলে গেছে এবারের ঈদের বাজার। অন্য মার্কেটগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পোশাকের ভিন্নতা। রমজানের শেষ দিকে এসে একদাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা।
ভ্যান চালান মোহাম্মদ হোসেন মিয়া। বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় সন্তানদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন জহুর হকার্স মার্কেটে। লালদিঘি এলাকায় মার্কেটের প্রধান ফটকে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। সেখান থেকেই কিছু টাকা জমিয়ে ছেলের জন্য ঈদের পোশাক নিতে এসেছি। দুই ছেলের জন্য প্রতিবছর ঈদের পোশাক জহুর হকার্স থেকেই কেনা হয়।
জহুর হকার্সের আটটি মার্কেটে পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় দোকান রয়েছে। শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও শাড়িসহ ঈদের পোশাকের সবকিছুই মিলছে এখানে। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের চাহিদার জোগান দিতে থরে থরে সাজানো নানা ধরনের পোশাকসামগ্রী। জহুর হকার্স মার্কেটে তিন ক্যাটাগরির দোকান আছে। কিছু দোকানে বাছাই করা মালামাল পাওয়া যায়। সুন্দর ডেকোরেশনের এসব দোকানে দেশীয় পোশাক কারখানা থেকে রপ্তানিযোগ্য উৎকৃষ্ট পোশাকসামগ্রী পাওয়া যায়। এসবের দাম একটু বেশি; তবে নামকরা শপিংমলের চেয়ে কম।
অভিজাত বিপণিবিতানে যে পোশাক আড়াই হাজার টাকা, সেগুলোই এখানে ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায় পাওয়া সম্ভব। দ্বিতীয় ধরনের দোকানে ভালো ও মাঝারি মানের মিশ্র মালামাল রয়েছে। মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এসব দোকানে বেশি আসেন। ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেনাকাটা করা যায় এখানে। তৃতীয় ধরনের দোকানগুলো খোলা ফুটপাতে। বাছাইবিহীন ও গড়পড়তা মালামাল এখানে পাওয়া যাচ্ছে অতি অল্প দামে। ৫০ বা ১০০ টাকার নির্ধারিত মূল্যে এখানে নানা ডিজাইনের পোশাক বিক্রি হয় দামাদামি ছাড়া। হাতে সময় থাকলে অনেকে এখান থেকে খুঁজে খুঁজে ভালো পোশাক কেনেন।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কেটে উপচে পড়া ভিড়। তবে নারীদের তুলনায় এখানে পুরুষের সমাগম বেশি। যে কারণে এখানে পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট বিক্রি ভালো হচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ দোকানিই একদামের পণ্য বিক্রি করছেন।
জহুর হকার্সের মা-মনি স্টোরের মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আমাদের কাছে ২০০ থেকে ৭০০ টাকায় প্যান্ট পাওয়া যায়। প্রতিটি শার্টের দাম পড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। রোজার শুরুতে বিক্রি খুব কম ছিল, দিনে ছয়-সাত হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত শুক্রবার থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। শবে কদরের পর বিক্রি আরও বাড়বে।
বিগবাজার দোকানের মালিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আগের মতো মানুষ কেনাকাটা করতে পারছে না। আগে যিনি দুটো শার্ট-প্যান্ট কিনতে আসতেন এখন তিনি একটা শার্ট কিনে চলে যাচ্ছেন।
মার্কেটের সামনে মূল সড়কের সাথে লাগোয়া ফুটপাত জুতা দিয়ে সাজিয়েছেন বেশ কয়েকজন দোকানি। তারা বলেন, প্রচুর মানুষ আসছে জুতা কিনতে। দিনের বেলায় গরম পড়াতে বেচাকেনা কম হলেও রাতের দিকে ক্রেতা থাকে বেশি। এখানে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় ক্রেতারা পছন্দসই জুতা কিনতে পারছেন।
পূর্বকোণ/ইব