চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

বড় সাজ্জাদের হাত ধরে অপরাধ জগতে আসে ছোট সাজ্জাদ

নাজিম মুহাম্মদ

১৬ মার্চ, ২০২৫ | ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

ভারতে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী আট হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ হোসেনের হাত ধরেই অপরাধ জগতে পা রাখেন ছোট সাজ্জাদ।

 

হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। সে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৪ মামলার আসামি। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ। বিদেশে বসেই সাজ্জাদ নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করাতো তাকে দিয়ে।

 

গত ২৮ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো। আমি হার মানবো না। দেখি, কার জোর বেশি।

 

তাহসীন হত্যা : গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়ার উর্দুপাড়া এলাকায় তাহসীন তাঁর ব্যবসার জন্য আনা বালু ও ইট রাখেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে মজুতের জন্য এক ট্রাক বালু আনা হয়। এ কারণে আফতাব সেখানে আসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি নোহা মাইক্রোবাস আসে। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে আফতাবকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোঁড়া হয়। এরপর সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার সহযোগী মাহমুদ, হাছানসহ চারজন গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকেন। তারা আফতাবের উরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যান। আশপাশে লোকজন থাকলেও তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ এগিয়ে আসেননি। তাহসীন হত্যায় গত বছরের ২৩ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বাবা মো. মুছা। মামলায় পাঁচজনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। তারা হলেন, সাজ্জাদ হোসেন, মো. হাসান, মোহাম্মদ, খোরশেদ প্রকাশ খালাতো ভাই খোরশেদ ও মো. হেলাল। এদের মধ্যে হেলাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও বাকী চারজনের হদিস পায়নি পুলিশ।

 

কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুই খুন : গত বছরের ২৯ আগস্ট কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুইজনকে গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ ও তার অনুসারীরা। নিহতর হলেন, হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশ গ্রামের মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে মো. আনিস ও তার বন্ধু মাসুদ কায়সার।আনিস হত্যায় নগরীর বায়েজিদ থানায় গত বছরের ৩০ আগস্ট মামলা দায়ের করেন আনিসের স্ত্রী শামিম আকতার মনি। মাসদু হত্যায়ও জেলার হাটহাজারী থানায় একই দিনে একটি মামলা দায়ের করেন নিহত মাসুদের ভাই মো. আরিফ। দুটি মামলায় সুনির্দিষ্ট চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, মো. আরমান বাচ্চু (৩৫), মো. জাহাঙ্গীর (৪০), সাজ্জাদ হোসেন (২৫) ও মো. হাসান (৩৫)। জোড়াখুনের ঘটনার আড়াই মাস পার হতে চললেও চার আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

 

আনিছ ইট বালি ব্যবসা করেন। গত ২৯ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০ টার সময় বন্ধু মাসুদ কায়ছারকে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে কুয়াইশ মোড়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এলাকার লোকজন আহত আনিছকে যখন উদ্ধার করতে বের হয় তখন আনিছের বন্ধু মাসুদের সাথে হাটহাজারী পশ্চিম কুয়াইশ ফারুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাদের দেখা হয়। তখন মাসুদ তাদেরকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় (২৯ আগস্ট) আনিছসহ একটি অটোরিকশায় করে বায়েজিদ বোস্তামী কুয়াইশ-অক্সিজেন রোডের নাহার গার্ডেনের পূর্ব দিকে পৌঁছালে তিন চারজন যুবক আনিছকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি করে। মাসুদ তখন পার্শ্ববর্তী বিল দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মাসুদ তার পরনের কাপড় পাল্টাতে বাসায় যাবার পথে হাটহাজারী পশ্চিম কুয়াইশ ফারুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে সাবেরের দোকানের সামনে পৌঁছালে একই যুবকরা মাসুদকেও গুলি করে হত্যা করে।

 

অভিযানে যাওয়া পুলিশকেই গুলি : গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরীর অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে একটি সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালান সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন আহত হয়। পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয় তখন।

 

পুলিশ তখন জানিয়েছিল, সাজ্জাদের অবস্থান শনাক্ত করে গভীর রাত সাড়ে তিনটা থেকে ভোর চারটার দিকে অভিযানে যায় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই সাজ্জাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।

 

উল্লেখ্য, বহদ্দারহাট আট হত্যা মামলার আসামি ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী হিসেবে এই সাজ্জাদ অপরাধজগতে পা রাখেন। এরপর দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৪টি মামলা রয়েছে। শেষ গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। স্থানীয় লোকজন জানান, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরীর চান্দগাঁও হাজিরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান সাজ্জাদ।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট