স্বাধীনতার পর থেকে ভাগ্য ফেরাতে বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে পাড়ি জমাতে শুরু করে। বিদেশে পাড়ি জমানো বেশিরভাগ বাংলাদেশির পেশা ছিল শ্রমিকের। কিন্তু একই সময়ে ভারত কিংবা পাকিস্তানের লোকজন মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিলেও তুলনামূলক উন্নত পেশা নিয়ে গেছে তারা। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এ দুই দেশের মানুষ ভাল অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তারা এগিয়েছে ঈর্ষণীয়ভাবে।
তারই একটি চিত্র দেখা গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশটিতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের শতাধিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থাকলেও বাংলাদেশিদের জন্য রয়েছে মাত্র দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার কারণে প্রতি পদে পদে ভুগছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মূলত যথাযথ পরিকল্পনার অভাব ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে এ সংকট তৈরি হয়েছে।
দৈনিক পূর্বকোণকে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, দুবাই এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ বিজনেস এসোসিয়েশন, আল আবির’র জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক। তিনি ভাগ্য ফেরাতে ১৯৯৮ সালে পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। শুরু থেকে তিনি সেদেশে ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। আমিরাতে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে শুধু নিজের ব্যবসা প্রসারে ব্যস্ত থাকেননি, জড়িত রয়েছেন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডেও। এছাড়াও তিনি সেদেশে অসংখ্য সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে।
দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুটি বাংলাদেশি স্কুল রয়েছে, এসএসসি মানের এই দুটি স্কুল ইংলিশ কারিকুলামে পরিচালিত হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে। যা শেখ খলিফা বিন যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল নামে পরিচিত। দ্বিতীয়টির নামকরণ করা হয়েছে রাস আল খাইমা বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল। দুটি স্কুলে প্রায় দেড় হাজারের উপর ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১২ লক্ষের উপর প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করলেও জনসংখ্যা অনুপাতে স্কুল সংখ্যা নিতান্তই কম। তবে দেশটিতে ভারত, পাকিস্তানের স্কুল সংখ্যা প্রায় শতাধিক।
শুধু তাই নয়, ভারত ও পাকিস্তান তাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আবর আমিরাতে অসংখ্য হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে শুধু ওই দেশগুলোর নাগরিক নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরাও স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে এন এম সি হসপিটাল, স্টার হসপিটাল, জুলেখা হসপিটালসহ একাধিক হসপিটালে শতশত ভারতীয় ও পাকিস্তানি চিকিৎসক ভারত ও পাকিস্তানসহ দেশটিতে বসবাসরত সকল দেশের নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ এই দেশটিতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের অবাধ বিচরণের সুযোগ থাকলেও কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে এখনো তারা ভালো কোন অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। ফলে প্রবাসীরা বিদেশি চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিজের ভাষায় রোগব্যাধির কথা বলতে না পারায় সঠিক চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
অপরদিকে এই দুই খাতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রবাসী নাগরিকদের একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে; অন্য দিকে নিজ দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছে অনেক বেশি।
মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। ভারতে রয়েছে প্রায় ১৭ লাখ। আমিরাতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রভাব বেশি থাকায় তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশিরা পিছিয়ে পড়ছে। অথচ এখন আমিরাত থেকে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসছে বাংলাদেশে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। তাতে রেমিটেন্সেও বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক বলেন, আমিরাতে বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্য, শুকনো খাবার, সবজি, ফলমূলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশিদের এ ব্যবসা সেখানে দ্রুত প্রসারমান হচ্ছে। তাই এসব খাতে ব্যবসা আরো প্রসারে বাংলাদেশ সরকারকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
পূর্বকোণ/ইব