
চট্টগ্রাম বন্দর হতে আমদানিকৃত লুব্রিকেন্ট অয়েল খালাসে ৭৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার জন্য খরচের অনুকূলে ভাউচার তৈরি করেন সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তা। পরবর্তীতে ব্যাংকের মাধ্যমে তিনটি চেকে তা পরিশোধও করা হয়। কিন্তু খরচের সেই ভাউচারে ছিল না অনুমোদনকারীর স্বাক্ষর। বরং অর্থ লোপাট করতে নিজেরাই নিজেদের স্বাক্ষর দিয়ে অর্থ ছাড় করান। পরবর্তীতে বিভিন্ন একাউন্টের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেন। প্রায় এক যুগ আগে এমন ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে (এসএওসিএল)। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে এমন তথ্য।
দুদক বলছে, শুধুমাত্র একটি ঘটনা নয়। আলোচ্য ৭৮ লাখ টাকা ছাড়াও একই কায়দায় আরও ১২ লাখ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা আত্মসাৎ করেন খোদ কোম্পানিটির তিন কর্মকর্তা। যাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন ব্যবসায়ীসহ আরও পাঁচজন। তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি কারও। অসাধু উপায়ে পারস্পরিক যোগসাজশে রাষ্ট্রীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান এসএওসিএল’র ৯০ লাখ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক।
গতকাল সোমবার দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেন দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ। তিনি বলেন, কমিশনের নির্দেশে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। মামলা তদন্তকালে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে।
মামলার আসামিরা হলেন : এসএওসিএল’র ম্যানেজার (এডমিন) বেলায়েত হোসেন (৫৭), ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) কামরুল হোসেন (৫২), উপ ব্যবস্থাপক (নিরীক্ষা) আতিকুর রহমান (৪৫), এমআই চৌধুরী এন্ড কোং এর পরিচালক মোসাম্মৎ ফেরদৌস আরা (৫২), প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফাইয়াজ ফারহান (৩৪), রাইফেলস ক্লাব মার্কেটের ফেমাস ইলেক্ট্রিক এন্ড ইলেক্ট্রনিক্সের প্রোপাইটর হারিছ উদ্দিন, সদরঘাটের নারায়ণ চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী রীতা চক্রবর্তী। এদের মধ্যে বেলায়েত হোসেন, কামরুল হোসেন এবং আতিকুর রহমানকে দুটি মামলাতেই আসামি করা হয়।
একটি মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ১৬ জুন এসএওসিএল’র আমদানি করা লুব্রিকেট অয়েল চট্টগ্রাম বন্দর হতে খালাস করতে খরচের অনুকূলে ভাউচার তৈরি করে অভিযুক্তরা নিজেরাই টাকা উত্তোলন করেন। এ কাজে যে ভাউচার তৈরি করা হয় সেখানেও ছিল না অনুমোদনকারীর স্বাক্ষর।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখায় যায়, অনুমোদনকারীর স্বাক্ষর ব্যতিরেকে ফেমাস ইলেট্রিক এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স নাম প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধের নিমিত্তে বিল পরিশোধপত্র তৈরি করে আসামি বেলায়েত হোসেন, কামরুল হোসেন এবং আতিকুর রহমান স্বাক্ষর করে পেমেন্ট অর্ডার প্রস্তুত করে। একই তারিখে কোম্পানির ব্যাংক এশিয়া লিমিডেট ইপিজেড শাখার একটি চেকের মাধ্যমে ২৬ লাখ টাকা ফেমাস ইলেক্ট্রিক্স এন্ড ইলেক্ট্রনিক্সকে প্রদান করা হয়।
একইভাবে একই তারিখে একই কায়দায় রিতা চক্রবর্তীর নামে ২৬ লাখ টাকার এবং নারায়ণ চক্রবর্তীর নামে আরেকটি চেকের মাধ্যমে আরও ২৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন একাউন্টে হস্তান্তর করা হয়। এভাবে আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ আনা হয়।
অন্যদিকে, অন্য মামলায় শুধুমাত্র বেলায়েত হোসেন, কামরুল হোসেন আতিকুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ১২ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
পূর্বকোণ/ইব