চট্টগ্রাম শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

অবশেষে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে অটোমেশন শুরু

সারোয়ার আহমদ

২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:০৪ অপরাহ্ণ

অবশেষে অটোমেশনের যুগে প্রবেশ করলো বহু প্রতীক্ষিত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। এর ফলে সরকারি দপ্তরে ধর্ণা দিয়ে বিভিন্ন সনদ ও নথি জমার কাজ কমে যাবে। পাশাপাশি সময় ও অর্থের অপচয় রোধ হবে। গত ২ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ নামে আনুষ্ঠানিক এই কার্যক্রম শুরু হলেও এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ধাপে ধাপে অল্প সময়ের মধ্যে এই অটোমেশন পুরোদমে শুরু হলে এর সুফল মিলবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। কমে যাবে অভিযোগ ও হয়রানি।

 

২ জানুয়ারি উদ্বোধনের পর এবার পুরোদমে এই কার্যক্রম শুরু করতে গত ১৪ জানুয়ারি এক পরিপত্র জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই অনুযায়ী

 

বাংলাদেশে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে সাতটি সরকারি সংস্থার সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং পারমিট (সিএলপি) বাধ্যতামূলকভাবে ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ (বিএসডব্লিউ) সিস্টেমের মাধ্যমে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

প্রাথমিকভাবে ১৯টি সিএলপি ইস্যুকারী সংস্থার মধ্যে এই পর্যায়ে সাতটি সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারির পর সাতটি সরকারি সংস্থার সিএলপি অর্থাৎ পণ্য খালাসের জন্য প্রযোজ্য সব ধরনের সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ম্যানুয়ালি আর গ্রহণ করা হবে না।

 

সংস্থাগুলো হলো- ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ), রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারো (ইপিডি), বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অথরিটি ফর কেমিকেল উইপন্স কনভেনশন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর।

 

যেভাবে বিএসডব্লিউ ব্যবহার করা যাবে :

বিএসডব্লিউ বাস্তবায়নের জন্য এনবিআর একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করেছে। যা সিএলপি আবেদন এবং অন্যান্য কার্যক্রম সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারকরা তাদের বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) ব্যবহার করে বিএসডব্লিউ সিস্টেমে (নংহিনৎ.মড়া.নফ) নিবন্ধন করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি ডিজিটালভাবে জমা দিতে পারবেন। যা সংশ্লিষ্ট সংস্থা যাচাই করে অনলাইনেই সার্টিফিকেট/পারমিট ইস্যু করবেন।

 

যে সুবিধা মিলবে অটোমেশনে :

বিএসডব্লিউ সিস্টেম ব্যবহারের ফলে পণ্যছাড় সহজীকরণের মাধ্যমে ২৪/৭ ভিত্তিতে আমদানি-রপ্তানি সম্পন্নকরণ; অনলাইনে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের জন্য প্রযোজ্য সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং পারমিশনের আবেদন ও ইস্যু কার্যক্রমের গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের সুবিধা; সরকারি কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে; একটি কমন প্লাটফর্মে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার প্রতিনিধিদের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে; স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় হিউম্যান ইন্টারেকশন কমবে; সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে; সবচেয়ে কম সময়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি নিশ্চিত হবে; আমদানি ও রপ্তানির সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে; দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে বাংলাদেশের দৃশ্যমান অগ্রগতি মিলবে।

 

যেভাবে শুরু বিএসডব্লিউ কার্যক্রম :

২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট (টিএফএ) স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে বলা আছে ‘সকল সদস্যরাষ্ট্র সিঙ্গেল উইন্ডো স্থাপনের প্রচেষ্টা নেবে।’ যার প্রেক্ষিতে শুরু হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’। এ প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে আমদানি-রপ্তানি সহজতর হবে, ব্যবসায়ীদের ব্যয় হ্রাস পাবে এবং বন্দরে পণ্যচালান খালাসে কম সময় লাগবে। এ প্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধের উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৭ সালে এ প্রকল্প গৃহীত হয়।

প্রকল্পের আদোপান্ত

একনেকে এই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদিত হয় ২০১৭ সালের। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয় ২০১৮ সালের এপিলে এবং প্রজেক্ট ইমপ্লিমিন্টেশন ইউনিট গঠন করা হয় ওই বছরের জুলাইয়ে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত ৩৮টি দপ্তরের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষর করা হয় ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট। প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

 

এই প্রকল্পের প্রধান দুটি সিস্টেম-একটি হলো ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ (বিএসডব্লিউ) সফটওয়্যার, অপরটি ‘এডভান্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এআরএমএস)’। এআরএমএস সিস্টেমটি বিএসডব্লিউ সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত থাকার ফলে কোন আবেদনকারী কোন সিএলপি’র জন্য বিএসডব্লিউ প্লাটফর্মে আবেদন করলে, তা সাথে সাথে এআরএমএস এর সহায়তায় আবেদনকারীর পূর্ববর্তী ট্র্যাক রেকর্ডের ফিডব্যাকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে আবেদনটি ফরওয়ার্ড হবে। ফলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা আবেদনকারীর ট্র্যাক রেকর্ড সম্পর্কে অবহিত থাকবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যস্থাপনার মাধ্যমে সিএলপি ইস্যুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট