ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালীন নগরীতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের ১৯ দিনের তথ্য চেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য চেয়েছে ট্রাইব্যুনাল। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নগরীর ১৬ থানা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্যের চাহিদা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার।
নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে গত ৬ জানুয়ারি পাঠানো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলমান। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ১৬ জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ ও ডিবি পুলিশ সদস্যদের নিম্নবর্ণিত তথ্যাদি বিশেষ প্রয়োজন।
চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তা হলো- আন্দোলন চলাকালীন থানা ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন সংক্রান্ত সিকিউরিটি প্ল্যানের সত্যায়িত ফটোকপি, মোতায়েনকৃত থানা ও ডিবি পুলিশ সদস্যদের তালিকা, সিসির সত্যায়িত কপি, নাম ও পদবী, পরিচিতি নম্বর ও মোবাইল নম্বর, পুলিশ কর্তৃক গুলিবর্ষণ হয়ে থাকলে তার তথ্যাদি গৃহীত ব্যবস্থাসহ সত্যায়িত ফটোকপি, ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় থানা ও ডিবি পুলিশের সাধারণ ডায়েরির সত্যায়িত ফটোকপি।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালীন ৩৬ দিনের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল পুলিশ সদরদপ্তর থেকে। মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনের আন্দোলনের সাত ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলন দমনে সাবেক সরকারের বিভিন্ন বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডার কর্তৃক ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত কাজে সহায়তা জন্য ‘ছক’ মোতাবেক সাত ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছিল।
যে সাত ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে তা হলো- ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নাম ও পরিচিতি নম্বর, কর্তব্যে নিয়োজিত হওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান, গুলিবর্ষণ হয়ে থাকলে তার সংখ্যা ও অস্ত্রের ধরন, অস্ত্র ব্যবহারকারী সদস্যদের নাম ও পরিচিতি, হতাহত হয়ে থাকলে তাদের বিবরণ, নির্বাহী তদন্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিবেদনের কপি এবং অন্যান্য আবশ্যক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
নির্বাহী তদন্তের উদ্যোগ পুলিশের: আন্দোলনের সময় সারাদেশে সংঘটিত প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনার নির্বাহী তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রজনতার ওপর কারা গুলি করেছে তার সঠিক তথ্য উঠে আসবে- এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।
গত ৩ ডিসেম্বর সদরদপ্তরের ডিআইজি কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাধারণভাবে পুলিশের ওপর সকল দায়ভার অর্পিত হচ্ছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য গুলিবর্ষণের প্রতিটি ঘটনার নির্বাহী তদন্ত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এতে গুলিবর্ষণ যথাযথ (ন্যায়সঙ্গত/অন্যায়ভাবে) হয়েছে কিনা তা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অনেক পুলিশ সদস্য অনাকাক্সিক্ষত দায় থেকে নিষ্কৃতি পাবেন। প্রতিটি ইউনিটের গুলিবর্ষণের সকল ঘটনা বিধি-বিধান অনুসরণ করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাহী তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে চিঠিতে।
পূর্বকোণ/ইব