চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

বুলেটে ঝাঁঝরা পায়ুপথ নিয়ে লড়ছেন মেহেদী

ইমাম হোসাইন রাজু

৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১:৫৮ অপরাহ্ণ

মেহেদী হাসান। বয়স এখন ২৬। বাবা জসিম উদ্দিন একটি বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার। মা লিপি আক্তার গৃহিনী। বাবার সামান্য আয়ে চলে তাদের টানাটানির সংসার। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় মেহেদী। যার কারণে নিজেই যুক্ত হন গাড়ি চালকের পেশায়। প্রাইভেটকার চালিয়ে যা উপার্জন হয়, তাতে ভালোই চলছিল তাদের সংসার।

 

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুথানের বিজয় উল্লাসে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন মেহেদী। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় আয়ের পথ। আর বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার পায়ুপথ। সেই ঝাঁঝরা পায়ুপথ নিয়ে গত পাঁচ মাস ধরে লড়ে যাচ্ছেন মেহেদী। আর স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে পারছেন না তিনি। শরীরের বাইরে ব্যাগ লাগিয়েই চলতে হচ্ছে তাকে।

 

অবশ্য, তার পায়ুপথ স্বাভাবিক করতে ইতোমধ্যে দুটো অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পায়ুপথ এখনো স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসান। গত ২৯ ডিসেম্বর তার পায়ুপথের দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

 

মেহেদী হাসান জানান, গত ৫ আগস্ট বিকেলে তার বাসা নগরীর মনসুরাবাদ ওয়াপদা কলোনি থেকে বিজয় মিছিলে বের হন তিনি। এরমধ্যে নগরীর মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন্স এলাকায় গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীরের বিভিন্ন অংশসহ পায়ুপথে গুলিবিদ্ধ হন মেহেদী। এরপর প্রথমে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসলেও পরবর্তীতে বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। কিন্তু বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে মেহেদী ও তার পরিবারের।

 

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে মেহেদীর চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শমসের নাহিদের সমন্বয়ে টিমটি গত ২৯ ডিসেম্বর মেহেদীর দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। যার তত্ত্বাবধান করছেন ডা. ইরফান চৌধুরী।

 

চমেক হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাকে বাইপাস করে কোলস্ট্রমি ব্যাগ সিস্টেম করে অন্যত্র মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সেটি দিয়েই আপাতত চলতে হবে তাকে। পরবর্তীতে জেনারেল সার্জারি করা হবে।

 

মেহেদি হাসান বলেন, অস্ত্রোপচার করলেও পায়ুপথ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ডাক্তাররা বলেছেন আরও অস্ত্রোপচার লাগবে। আপাতত আলাদা একটি ব্যাগ দিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে। এমন করুণ পরিণতি হবে তা কখনও কল্পনা করিনি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো কি-না এখনো জানি না।

 

ডা. ইরফান চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে মেহেদী হাসানের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়েছে। তার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে ভবিষ্যতে যা করতে হবে, তাই করা হবে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজেই মেহেদীর সাথে কথা বলেছেন। ‘প্রয়োজন হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নিব আমরা’।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট