চট্টগ্রাম বন্দরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক প্রতিষ্ঠান দেশের বেসরকারি ১৮টি অফডক প্রতিবছরেই তাদের আমদানি ও রপ্তানি উভয় কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েই প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালেও প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের এই বাণিজ্যে নতুন কোন অফডক সৃষ্টি না হলেও বিদ্যমান অফডকগুলোই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যের রপ্তানি ও আমদানি কনটেইানার হ্যান্ডলিং করে আসছে।
অফডক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস এসোসিয়েশনের (বিকডা) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অফডকগুলো ৭ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৯ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে। ২০২৩ সালে যা ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার ১৫২ টিইইউস। অর্থাৎ, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অফডকগুলো ৮৯ হাজার ৪০৭ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করেছে। এর মাধ্যমে রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অফডকগুলোর প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
অন্যদিকে, সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে অফডকগুলো আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪৯ টিইইউস। যা ২০২৩ সালে ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৭ টিইইউস। অর্থাৎ, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অফডকগুলো ৫১ হাজার ৯১২ টিইইউস আমদানি কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করেছে। এর মাধ্যমে আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অফডকগুলোর প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
প্রায় শতভাগ রপ্তানি ও বিপুল পরিমাণ আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালি কনটেইনার এনে অফডকগুলো তাদের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করে। ২০২৪ সালে অফডকগুলোয় এমন ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩০২ টিইইউস খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করে। যা বন্দরকে খালি কনটেইনারের স্তূপের মাধ্যমে কনটেইনার জট না হওয়ায় বিশেষ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল ৫ লাখ ৮২ হাজার ৬২৫ টিইইউস।
প্রসঙ্গত, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বন্দরগুলোতে পণ্য ডেলিভারি হয় বন্দরের বাইরে বিভিন্ন অফডক থেকে। শুধুমাত্র বাংলাদেশে বন্দর থেকে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারির নিয়ম চালু রয়েছে। এজন্য শহরের মধ্য দিয়ে প্রচুর ট্রাক, কাভার্ডভ্যানকে বন্দরে প্রবেশ করতে হয়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। এসব মাথায় রেখে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম শহরের বাইরে রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের বাইরে অফডক স্থাপনের বিধানও রাখা হয় আইসিডি নীতিমালায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন মহল থেকে বারবার বন্দরের এলসিএল কনটেইনারের পণ্য ডেলিভারি বন্দরের বাইরে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও একাধিকার আবেদন করা হয়েছে। সর্বশেষ নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এনবিআর চেয়ারম্যানকে এলসিএল কনটেইনারের পণ্য বন্দরের বাইরে থেকে ডেলিভারি নেওয়ার সুপারিশ করেন। তাও বিভিন্ন অজুহাতে ঝুলে রয়েছে।
অফডক প্রসঙ্গে বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান পূর্বকোণকে বলেন, অফডকগুলো থেকে বর্তমানে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য খালাসের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারির সময় ৩৮ ধরনের পণ্য ছাড়াও সবধরনের পণ্য অফডক থেকেই খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কারণ ওই সময় চট্টগ্রাম বন্দরের কানায় কানায় কনটেইনারে পরিপূর্ণ ছিল। ডেলিভারি কম হচ্ছিল এবং নতুন কনটেইনার রাখার জায়গাও ছিল না।
সেই ক্রান্তিকালে চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রেখেছিল এই অফডকগুলোই। চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ নিয়েছিল অফডকগুলো। সে সময় একমাসে প্রায় ৪৫ হাজার টিইইউস কনটেইনার কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই হ্যান্ডলিং করেছে। অর্থাৎ, অফডকগুলোর যে সক্ষমতা আছে তার প্রমাণ অফডকগুলো করোনাকালেই দিয়েছে। অথচ এখন সবধরনের পণ্য অফডকে হ্যান্ডলিং না হলেও সেই অফডকের কার্যক্রম নিয়ে এখনও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলে।
কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে কাস্টমস ও এনবিআরের কান ভারী করা হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের পর আর নতুন পণ্যের অনুমতি দেওয়া হয়নি। উপরন্তু বারবার অফডকের ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য বন্দর থেকেও দ্বৈত খালাসের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। যা দুঃখজনক।
একই প্রসঙ্গে বিকডা মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব পূর্বকোণকে বলেন, অফডকের আমদানি পণ্য ডেলিভারি বাড়ানো ও দ্বৈত ডেলিভারি প্রথা বন্ধে অনেক মিটিং হয়েছে। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি কাস্টমসের সভা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আমরা বলেছি শুধু ৩৮ ধরনের নির্ধারিত পণ্যকে অফডক থেকে খালাসের অনুমতি বাতিল করে সবধরনের পণ্য বন্দর ও অফডক উভয় থেকে ডেলিভারি নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
পূর্বকোণ/ইব