নতুন মেরুকরণে বিরোধ তুঙ্গে দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গন। জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে এ তৈরি হচ্ছে মেরুকরণ। এতে জড়িয়ে পড়ছেন কেন্দ্র থেকে জেলা এবং তৃণমূল নেতৃত্ব। তাতে বাড়ছে বিরোধ।
বিএনপির একাধিক নেতৃত্বের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ ইদ্রিছ মিয়াকে আহ্বায়ক, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ আলী আব্বাসকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে গত ৪ জানুয়ারি দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা।
বিষয়টি কেন্দ্রের অপর কিছু সিনিয়র নেতা এবং যারা নতুন কমিটিতে আসছেন তাদের কিছু অনুসারীর মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে ঘটনা নাটকীয়তার দিকে মোড় নেয়। এ অবস্থায় কিছু নেতার তাৎক্ষণিক তৎপরতায় বন্ধ হয়ে যায় নতুন কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে এ খবর ছড়িয়ে পড়েন দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যে। তাতে অনেকে খুশি হলেও কারো কারো মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষও। এ অবস্থায় জেলা কমিটিতে আসতে আগ্রহী অনেকে তৎপর হয়ে ওঠেন। তাতে কমিটি ঘোষণা বিলম্বসহ নতুন করে আরো অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির অপর একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সদস্য পদ ফিরে পাওয়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পটিয়ার এনামুল হক এনামকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি করতে চায় বিএনপির অপর একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তাতে সদস্য সচিবের নাম শোনা যাচ্ছে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়ার নামও। এছাড়াও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ আলী আব্বাস এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকেও জেলা বিএনপিতে আহ্বায়ক হিসেবে দেখতে চায় বিএনপির পৃথক দুইটি অংশ।
এ নিয়ে নানা নাটকীয়তা ছাড়াও তৈরি হচ্ছে একাধিক মেরুকরণও। তাতে বাড়ছে নানা গুঞ্জনের ডালপালাও। বিএনপি সূত্র জানায়, গত চার মাসের বেশি সময় ধরে কমিটি নেই দক্ষিণ জেলা বিএনপির। এ সময়ে একাধিকবার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র। কিন্তু কোনবারই আলোর মুখ দেখেনি নতুন কমিটি। তবে এবার কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে কেন্দ্র। তাতে যে কোন সময় ঘোষণা হতে পারে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি। কিন্তু সবাইকে সন্তুষ্ট করে এ মুহূর্তে কমিটি ঘোষণা করা কেন্দ্রের কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
বিগত ১৭ বছর ধরে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকা, মামলা-হামলার শিকার হওয়া নেতৃত্বের ভিড়ে সুসময়ের নেতারাও কাক্সিক্ষত পদ ভাগিয়ে নিতে এখন আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন -এমনটি অভিযোগ উঠেছে দলের তৃণমূলে। বিএনপির ওই সূত্রটি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৭ বছরে যাদের কোন সময়ে মাঠে দেখা যায়নি, তারাও এখন বিএনপির ত্যাগী নেতা সেজে গেছেন। অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা একটি মামলার আসামিও হননি, একদিনের জন্য জেলে যাননি, তারা এখন অত্যন্ত সুকৌশলে কেন্দ্রের একটি গ্রুপকে ম্যানেজ করে পদ ভাগিয়ে নিতে অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠেছেন।
যদি কোনো কারণে কমিটি গঠনে গ্রুপটি সফল হয়, তাহলে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে ভবিষ্যতে বড় মাশুল গুনতে হবে। এদিকে নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। যে কোন সময় ঘোষণা হতে পারে নতুন আহ্বায়ক কমিটি। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত করা হয়েছিল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।
এর আগে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর ৬৫ সদস্যের দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে নগর বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ আবু সুফিয়ান আহ্বায়ক ও বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছিল। এছাড়া এ কমিটিতে আলী আব্বাসকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। পরে তাকে বাদ দিয়ে ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছিল পটিয়ার এনামুল হক এনামকে।
পূর্বকোণ/ইব