চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘একশন প্ল্যান’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী বর্ষার আগেই সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে এই ‘একশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন সরকারের তিন উপদেষ্টা।
সংশ্লিষ্টরা জানান- গত রবিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজমও অংশ নেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতিনিধি এবং বুয়েটের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়- প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন বর্ষায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে প্ল্যান তৈরির নির্দেশনা দেন। ফাওজুল কবির খানের সাথে এই সংক্রান্ত কাজে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ফারুক ই আজমকে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে একশন প্ল্যান তৈরির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে আগামী বর্ষার আগে শহরের সব খাল ও ড্রেন পরিষ্কার করা, স্লুইস গেটের নির্মাণ কাজ শেষ করা, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং করা, সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ দেয়া হয়। আগামী ১৮ জানুয়ারি জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা জানতে বিভিন্ন খাল ও ড্রেন সরেজমিন পরিদর্শন এবং ১৯ জানুয়ারি সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আসন্ন বর্ষার আগে আমাদের করণীয়গুলো সভায় উপস্থিত উপদেষ্টা মহোদয়রা জানতে চেয়েছেন। যে কোনো উপায়ে যাতে জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখা যায় সে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, বর্ষার আগে যেহেতু খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে- তাই আমরা খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ চেয়েছি।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, তিন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে একটি বৈঠক হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে আগামী বর্ষায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্ষায় যেন নগরবাসী প্রকল্পের সুফল পায়- সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে।
সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া নতুন আরডিপিপি অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ব্যয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা এবং সময় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশের বেশি এবং ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার মত।
পূর্বকোণ/ইব