চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

বিজিএমইএ’র কার্যক্রম আইন অনুযায়ী পরিচালনার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ৩৫ বছরের ইতিহাসে নির্বাচিত বোর্ড বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের কোন নজীর নেই। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচিত বোর্ড বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ করেছে।

 

সেই প্রশাসককে ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সদস্যদের দাবি, বিজিএমইএ প্রশাসক আইন অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। গত ৩১ ডিসেম্বর বিজিএমইএ’র চট্টগ্রাম কার্যালয়ের চট্টগ্রামস্থ বিজিএমইএ’র সদস্যদের উপস্থিতিতে এক সভায় প্রশাসকের নানা কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে চট্টগ্রামের বিজিএমইএর সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম উভয়ের মোট ৮৭ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

 

এরমধ্যে প্রক্তন প্রথম সহ-সভাপতির মধ্যে এরশাদ উল্লাহ, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, এস এম আবু তৈয়ব, এম এ সালাম, সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরীসহ উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় সদস্যরা আক্ষেপ করে উল্লেখ করেন, প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রামের মত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সাথে এবং বন্দর-কাস্টমসসহ গুরুপূর্ণ দপ্তরের সাথে একটি বৈঠক করেন নি। চট্টগ্রামের পোশাক কারখানা মালিকদের কথা শোনার প্রয়োজন ছিল।

 

সভায় উপস্থাপিত নানা বিষয় উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে ও সম্মতিতে বিজিএমইএ’র প্রক্তন প্রথম সহ-সভাপতি এস এম নুরুল হক বিজিএমইএ প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেনকে চিঠি দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- বিজিএমইএ’র প্রশাসকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সহায়তা প্রদানের একটি মহলের পরামর্শে ১০ সদস্যের একটি সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সদস্যদের সাথে কোন আলোচনাও করা হয়নি।

 

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিজিএমইএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত একটি শক্তিশালী বাণিজ্য সংগঠন। যা পরিচালিত হয় বাণিজ্য সংগঠন আইন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, বিজিএমইএ’র নিজস্ব সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী। কিন্তু বর্তমান প্রশাসকের কর্মকাÐ বাণিজ্য সংগঠন আইন ও বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার বিপরীতমুখী।

 

অর্থ অপচয় করে অডিট ফার্ম নিয়োগ ও আদালতের আদেশ না মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রশাসক। এমন কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়- হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানিকে বিজিএমইএ’র সদস্য ফাইল অডিট এবং ভেরিফিকেশনের জন্য ১৪ লাখ টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছেন প্রশাসক। যা বাণিজ্য সংগঠন আইন ও সংগঠনের নিজস্ব সংঘবিধি ও সংঘস্মারকের কোন আইনেই প্রশাসক এই নিয়োগের এখতিয়ার নেই। এই টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

এছাড়া ওই অডিট ফার্ম নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বজন স্বীকৃত উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সভাপতি ব্যারিস্টার এ.এম. মাহবুব উদ্দিন খোকনের স্বাক্ষরিত গত ২৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের আইনি নোটিশ ও ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের প্রত্যয়নপত্র প্রেরণের পরও প্রশাসক নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড স্থগিত করেন নি, যা আইন পরিপন্থী।

 

এছাড়াও বিজিএমইএ’র নিজস্ব আইন উপদেষ্টা থাকা সত্তে¡ও প্রশাসক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে, পুনয়ায় অর্থের অপচয় করে ৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি ল-ফার্মকে আইনি পরামর্শের জন্য নিয়োগ করেন। যা বিজিএমইএ’র আর্থিক ক্ষতি সাধনসহ আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড। সদস্যপদ নবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়- বিজিএমইএ’র সদস্যপদ নবায়নে ফ্যাক্টরি এ্যাক্ট ১৯৬৫ এর আওতায় হালনাগাদ কারখানা লাইসেন্সের অনুলিপি চাওয়া হয়েছে। অথচ ফ্যাক্টরি এ্যাক্ট ১৯৬৫ এখন বলবৎ নেই।

 

এছাড়া সদস্যপদ নবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে। অথচ বাণিজ্য সংগঠন আইন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, বিজিএমইএ’র নিজস্ব সংঘস্মারক ও সংঘবিধির কোথাও সদস্যপদ নবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট লাগবে এমন কিছু বলা নেই। এমনকি বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কখনই সদস্যপদ নবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট চাওয়া হয়নি।

 

প্রশাসকের কার্যপরিধি প্রসঙ্গে বলা হয়- বাণিজ্য সংগঠন আইন প্রশাসকের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ‘প্রশাসক তার মেয়াদের মধ্যে নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন করতে পারবেন’। অর্থাৎ নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ডই বিজিএমইএ’র নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু বর্তমান প্রশাসক নির্বাচনের দিকে না গিয়ে নিজস্ব কাজে মনোযোগী বেশি।

 

তাছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশ অনুযায়ী প্রশাসক ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই কাজ সম্পন্ন করার অনুরোধ জানানো হয় সদস্যদের চিঠিতে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট