চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

স্বাস্থ্যেও হাছান মাহমুদের দাপট!

ইমাম হোসাইন রাজু

৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১:১৬ অপরাহ্ণ

গত ১৫ বছরে নানা সময়ে পরিবেশ ও জলবায়ু, তথ্য ও সম্প্রচার এবং পররাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ড. হাছান মাহমুদ। ক্ষমতার দাপট কেবল নিজ মন্ত্রণালয়েই দেখাননি চট্টগ্রাম-৭ আসনের (রাঙ্গুনিয়া) সাবেক এই সংসদ সদস্য। স্বাস্থ্য বিভাগেও ছিল তাঁর দাপট। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন থেকে সব কিছুতেই ছিল সাবেক এ মন্ত্রীর ক্ষমতা।

 

শুধু তিনি নন, তার পাঁচ ভাই ও একান্ত সহকারীর দাপট ছিল এ খাতে। যেন হাছান ব্রাদাস দাপট। এবার প্রভাবশালী সাবেক এ সংসদ সদস্যের সুপারিশে বা ডিও লেটারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) নিয়োগ, পদায়ন, বদলি এবং ঠিকাদার নিয়োগসহ নানা বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু সাবেক এ সাংসদ নন, তার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সাত সদস্যের সুপারিশের কিংবা নিকট আত্মীয়ের বিষয়ে তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া, দুদক আরও ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিষয়েও তথ্য চেয়েছে।

 

জানা গেছে, সাবেক পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। এরপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

তথ্য চাওয়া ব্যক্তিরা হলেন: সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাঙ্গুনিয়ার সাবেক এমপি ড. হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরান ফাতেমা, মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদ, ভাই এরশাদ মাহমুদ, খালেদ মাহমুদ, মোরশেদ মাহমুদ, রাসেল মাহমুদ, তার একান্ত সহকারী ইমরুল করিম রাশেদ, কায়ছার, গিয়াস উদ্দিন স্বপন এবং তার কোন আত্মীয় স্বজন ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুপারিশে কোন নিয়োগ, পদায়ন, বদলি কিংবা অন্যান্য কোন কাজে সুপারিশ কিংবা ডিও লেটার দিয়েছেন কি-না, তার তথ্য চাওয়া হয়।

 

এছাড়াও দি বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিস লিমিটেড, একাডেমি অফ মেরিন এডুকেশন এন্ড টেকনোলজি লিমিটেড, বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিস জে.এ.এস লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট এন্ড হোল্ডিংস, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সোলার পাওয়ার লিমিটেড, সুখি বাংলা ফাউন্ডেশনের নামে কিংবা এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামেও তথ্য চাওয়া হয়।

 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্ণিত ব্যক্তি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি কোন নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি পেয়েছে কিনা? যদি নিয়োগ পেয়ে থাকে তবে তিনি কত সালে কোন পদে নিয়োগ পয়েছেন? পেয়ে থাকলে তার সম্পর্কে সমুদয় ডকুমেন্টের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি যতগুলো নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে তাদের মধ্যে কারো চাকরির জন্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সুপারিশ আছে কিনা বা তার ডিও লেটার আছে কিনা? যদি থাকে তবে তিনি কত সালে কোন পদে নিয়োগ পেয়েছেন? পেয়ে থাকলে তার সম্পর্কে সমুদয় ডকুমেন্টের সত্যায়িত ফটোকপি, এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ২০১০ সালের থেকে অদ্যাবধি কোন ঠিকাদার নিয়োগ পেয়েছে কিনা? পেয়ে থাকলে তার সম্পর্কে সমুদয় ডকুমেন্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে কোন পদায়ন বা বদলি করা হয়েছে কিনা? হয়ে থাকলে তার তালিকার পাশাপাশি অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ডকুমেন্ট সত্যায়িত ফটোকপি প্রেরণের জন্য বলা হয়।

 

গত ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অধ্যক্ষ বরাবর প্রেরণ করা চিঠিতে ৫ জানুয়ারির মধ্যে সকল তথ্যের সত্যায়িত ফটোকপিসহ বক্তব্য প্রদানের জন্য বলা হয়। জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমলেশ মন্ডল চিঠি প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তথ্য চেয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট