চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

অনন্যা আবাসিকের বিলাসী ভূমিতে সবজির সমারোহ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | ২:২০ অপরাহ্ণ

অইল্যা-ফইল্যা, মজুরি ও টুইব্যা- বামুনশাহী খালের উপকণ্ঠে পলি জমে গড়ে ওঠা একেকটি ফসলি জমির নাম। আবহমান কাল থেকে মানুষের মুখে এই নামে পরিচিত ছিল কুয়াইশ এলাকার চাষাবাদের জমিগুলো। বছরজুড়ে তিন ফসলি ধান আবাদে ব্যস্ত থাকতেন চাষিরা। তবে এসব এখন অতীত। ১৬ বছর আগে বদলে যায় গ্রামবাংলার সেই চিরায়ত রূপ, লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ২০০৮ সালে পাঁচলাইশ ও হাটহাজারীর কুয়াইশ মৌজার কৃষিজমি ভরাট করে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে। ১৭০০ আবাসিক প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। সুউচ্চ-সুরম্য ও আলিশান দালান নির্মাণের লক্ষ্যে এসব জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বাধ সাধে নদীবিধৌত পলিমাটি। দালান নির্মাণে শক্ত মাটির স্তর না পাওয়ায় এখনও খালি পড়ে রয়েছে প্লটগুলো। বিলাসী ভবনের বদলে অনন্যা আবাসিকের প্লটে প্লটে এখন সবজি চাষের সমারোহ। তবে আন্তর্জাতিকমানের একটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে এখানে।

 

পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খান বলেন, পূর্ব পুরুষের আমল থেকে এটি ফসলি জমি ছিল। বছরে তিন মৌসুম ধান আবাদ হতো। খরস্রোতা বামুনশাহী খাল পাম্প (স্কিম) দিয়ে চাষাবাদ করতো স্থানীয় কৃষকেরা। চাষাবাদের জন্য বিখ্যাত অইল্যা বিল-ফইল্যা বিল, মজুরি বিল ও টুইব্যা বিলের ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। একদিকে উন্নয়ন হলেও অন্যদিকে উন্নয়নের কুফল দেখা দিয়েছে। জমি ভরাট করে বাড়িঘর ও ভবন নির্মাণ উপযোগী করা হলেও বিশাল এলাকা হাওরের মতো ডোবা-জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। চাষাবাদের এসব জমি অকেজো হয়ে পড়েছে।

 

দেখা যায়, কুয়াইশ সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে বিশাল আবাসিক এলাকা। খণ্ড খণ্ড প্লট ভাগ করা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে রয়েছে এসব প্লট। প্লট মালিকেরা জানান, নদীবাহিত পলি জমে এলাকাটি গড়ে ওঠায় ভবন নির্মাণের জন্য মাটির শক্ত স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে প্লট মালিকেরা বাড়ি নির্মাণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে প্লটে প্লটে শোভা পাচ্ছে সারি সারি সবজিক্ষেত। শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবধরনের সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। সবজি ছাড়াও ধান আবাদ হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

 

প্লট মালিক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, তিন কাঠার প্লটে তার ফুফাতো ভাই কয়েক বছর ধরে সবজি চাষ করে আসছেন। বেশিরভাগ প্লট মালিক জায়গা দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা লোকদের বিনা পয়সায় (খাজনা ছাড়া) সবজির আবাদ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। গত বুধবার কথা হয় মো. ইউনুস (৫২), নুর মোহাম্মদ (৩৫), মো. মামুনসহ (২৫) ৭-৮ জনের সঙ্গে।

 

নোয়াখালীর হাতিয়া এলাকার ইউনুস জানান, ১০ বছর আগে এই এলাকায় এসেছেন। ৩-৪ বছর ধরে অনন্যা আবাসিক এলাকায় চাষাবাদ করে আসছেন। বছরজুড়ে নানা ধরনের সবজি ও ধানের আবাদ হয়। বর্ষাকালেও কৌশল করে বেগুন, ঢেঁড়স, কাঁচা মরিচসহ নানা শাক-সবজির চাষ করা হয়। ভরাট মাটি হওয়ায় এখানে সবধরনের সবজি ভালো হয়।

 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুমে অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে প্রতিদিন নানা ধরনের একশ ভ্যান সবজি বাজারে যায়। নগরের বহদ্দারহাট, কামাল বাজার, অক্সিজেন বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের সবজি বিক্রেতা ও মধ্যস্বত্বভোগী এখান থেকে সবজি কিনে নিয়ে যান। অনেকেই আবার ভ্যানগাড়ি করে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করেন।

 

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের নূর মোহাম্মদ পেঁয়াজের চারা বপন করছেন। তিনি বলেন, ২-৩ বছর ধরে পেঁয়াজের চাষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে বীজ থেকে চারা করা যায় না। তাই রংপুর থেকে চারা এনে রোপণ করা হচ্ছে। কয়েকটি প্লটে ৬-৭ হাজার পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হয়েছে।

 

মামুন নামে এক কৃষিশ্রমিক জানান, তিন বছর আগে পেঁয়াজের বীজ ও চারা রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। রোপণ পদ্ধতি না জানার কারণে ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেলে ক্ষতি কম হতো। পেঁয়াজ চাষ ভালো হতো।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট