সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ লাইন দিতে গিয়ে গত শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় রাঙ্গুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. রবিউল হোসেন রুবেল। মুহূর্তেই ঝলসে যায় ২৬ বছর বয়সী এ যুবক। শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলেই তার করুণ মৃত্যু। করুণ এ মৃত্যুর পর স্বাভাবিক দাফন হতে পারতো রুবেলের। কিন্তু শেষ যাত্রাতেও যেন স্বস্তি ছিল না তার।
অস্বাভাবিক কোন মৃত্যু হলে নিয়ম অনুযায়ী সেই মরদেহের ময়না তদন্ত করতে হয়। এ জন্য রুবেলের মরদেহ নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) মর্গে। কিন্তু দিনভর রুবেলের মরদেহে হাত পড়েনি কারও। কয়েক ঘণ্টা ধরে মরদেহ পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশে। যদিও শেষ পর্যন্ত ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল (শনিবার) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দাফন হয় তার। তবে করুণ মৃত্যুর পর শেষ যাত্রাতেও যেন স্বস্তি পাননি রুবেল।
স্বজনদের অভিযোগ- মর্গে আনার পর দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা বাইরে পড়ে থাকার পর মরদেহের ময়নাতদন্তের কাজ করেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মারা যাওয়া রুবেলের শ্যালক নঈম উদ্দিনও। তিনি তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে এসব তুলে ধরেন। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। মো. নঈম নামে ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে যাওয়া ভিডিওটি ৭ ঘণ্টায় ১৫ লাখ মানুষ দেখেন। যাতে দুই হাজার ৬শ’ মানুষ কমেন্ট করেন।
মুঠোফোনে নঈম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু বিকেলে ময়নাতদন্ত করা হয় না বলে জানানো হয়। যার জন্য হাসপাতালের ফ্রিজে মরদেহটি রাখা হয়। তখন আমাদের জানানো হয়, শনিবার সকাল আটটায় আসতে। ওই সময় মরদেহটি মর্গে নিয়ে এসে কার্যক্রম শুরু করা হবে।’ নঈম আরও বলেন, ‘শনিবার (গতকাল) সকাল আটটায় আসলেও তখন মর্গ তালাবদ্ধ ছিল। পরে ১০টার দিকে গেলে ফ্রিজ থেকে মরদেহটি নিয়ে আসতে বলেন। মরদেহ নিয়ে আসলে তখন জানানো হয় ডাক্তার দুপুর ১২টায় আসবেন। কিন্তু দুপুর একটাতেও ডাক্তার না আসায় জিজ্ঞেস করলে তখন জানানো হয়, ডাক্তার মিটিংয়ে। এরমধ্যে লাশের পঁচা দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। দুপুর দুইটাতেও যখন ডাক্তার আসেননি, তখন আমি লাইভে যাই। লাইভে বিষয়গুলো তুলে ধরি’।
লাইভে যাওয়ায় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ করে নঈম উদ্দিন আরও বলেন, ‘লাইভে কেনো গিয়েছি, সে জন্য আমার মোবাইল কেড়ে নিতে চেয়েছিল সেখানকার এক কর্মচারী। এক পর্যায়ে আমার শার্টের কলারও ধরে। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার পর ডাক্তার এসে লাশটি কাটেন। আজ আমার সাথে হয়েছে, ভবিষ্যতে যেন আর কারও সাথে এমন না হয় সেটির দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। ’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সুমন মুৎসুদ্দি বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। খবর নিয়ে দেখতে হবে।’
এদিকে, কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের মরদেহ ময়না তদন্তের কাজ করার জন্যই ব্যবহার হয় একমাত্র এ মর্গটি। যেখানে কলেজের ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহের প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন। যেখানে গড়ে প্রতিদিন দশটিরও বেশি মরদেহের কাজ করা হয়ে থাকে। অথচ একমাত্র এই ফরেনসিক বিভাগের ডোম, প্রতিবেদন প্রস্তুতসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মতো প্রয়োজনীয় জনবল নেই। যে কারণে অন্য বিভাগের জনবল দিয়ে কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এ বিভাগটি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মরদেহ আসলেই সঙ্গে সঙ্গে কিছু করা যায় না। কিছু আইনি প্রক্রিয়া থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আসবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মরদেহে হাত দেয়া যাবে না। সবকিছুই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হয়। অন্যদিকে, ময়নাতদন্তের জন্য যে জনবল প্রয়োজন তা নেই। কোনভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চমেকের মর্গে লাশ কাটার জন্য নিজস্ব কোন ডোম নেই। এ নিয়ে বহুবার চিঠি চালাচালি হয়েছে। বাইরের একজনকে দিয়ে এ কাজ করাতে হয়। আবার যে চিকিৎসক করবেন, সেই পদটিও খালি। অন্য বিভাগের চিকিৎসককে দিয়ে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি। এসব নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার চিঠি দেয়া হয়েছে।’
পূর্বকোণ/পিআর