মাস দুয়েক পরেই শুরু হচ্ছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ইফতার ও সাহরিতে ধর্মীয় নানা রীতিনীতির সঙ্গে ঐতিহ্যের সমন্বয়ে এই সময়ে যৎসামান্য পরিবর্তন ঘটে খাদ্যাভ্যাসের। দেশে চাহিদা বাড়ে ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেলসহ নানা পণ্যের। পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ বাড়ে ব্যবসায়ীদেরও।
ভোক্তার বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে প্রস্তুতি নেন ব্যবসায়ীরা। তবে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রমজান ঘিরে দৌরাত্ম্য বাড়ে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চক্রের। বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। তাতে ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যায় পণ্যের দাম।
অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল কয়েক বছরের চেয়ে এবার তুলনামূলক নাগালের মধ্যেই থাকবে রমজানে পণ্যের বাজার। ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই ব্যাপকভাবে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলছেন আমদানিকারকরা। এরমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে শুরু করেছে খেজুর, ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্য। তাতে দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে কমছে দাম।
গতকাল বুধবার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, গেল দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) সাড়ে চারশ’ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ছোলার দাম। একই সময়ে মণপ্রতি ১০০ টাকা কমেছে চিনির দাম। সপ্তাহ দুয়েক আগে মণপ্রতি ৪৩শ টাকায় বিক্রি হওয়া ছোলা এখন ৩৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে। ৪৩শ ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২শ ৩০ টাকায়। একই সময়ে দাম কমেছে পেঁয়াজ, মসুর ডাল ও মটর ডালের।
গেল ১৯ ডিসেম্বর পাইকারিতে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ১৫ টাকা। খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। দু’সপ্তাহ আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া মটর ডাল কেজিতে ৩-৪ টাকা কমে ৫৬-৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে। তবে মাঝারি মসুরের দাম কমলেও বেড়েছে চিকন মসুরের। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩ টাকা কমে মাঝারি মসুর ৯৭ টাকায় এবং ৬ টাকা বেড়ে ১২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিকন মসুর।
এদিকে রমজান পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ব্যাপকহারে এলসি খোলা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের সব ধরনের পণ্য ব্যাপকভাবে আমদানি হচ্ছে। তাই এবারের রমজানে কম থাকবে সবকিছুর দাম। সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় দামও কমছে বেশ। কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা ও ডালের দাম কমেছে। অন্যান্য পণ্যের দামও কমতির দিকে।
অন্যদিকে রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাজার তদারকির জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, টাস্কফোর্সের নিয়মিত কার্যক্রম তো চলছেই। রমজানে বাজার তদারকি কার্যক্রম নিশ্চয় আরও জোরদার হবে। দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় নগর ও উপজেলায় সুলভমূল্যে বাজার পরিচালনার পরিকল্পনা আছে। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
রমজানে দ্রব্যমূল্য ভোক্তাদের নাগালে রাখতে তৎপর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও। অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, এখন থেকেই আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। চট্টগ্রামে বাণিজ্য উপদেষ্টা মহোদয়ও এসেছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এডিজি স্যারও এসেছেন, দফায় দফায় আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করছি। আমাদের কার্যক্রম চলছে, খাতুনগঞ্জেও আমাদের নজরদারি আছে।
ভোগাতে পারে ডলারের দামের তারতম্য:
রামজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপক আমদানিতে দাম কমলেও ব্যাংক ভেদে ডলারের দামের তারতম্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে এলসি খোললেও পণ্য আমদানির পর দেখা যায় একেক ব্যাংক একেক মূল্য রাখছে। কোনো ব্যাংক ১২৩ টাকা দাম রাখছে তো কোনো ব্যাংক দাম রাখছে ১২৮ টাকা। এটার প্রভাব পণ্যের দামের ওপর পড়বে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ব্যাংকগুলো ডলারের দাম নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। একেক ব্যাংক একেক রকম দাম নিচ্ছে। এতে কোনো কোনো ব্যবসায়ী লাভবান হলেও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তার প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। তাই সব ব্যাংকে ডলারের দাম একই রাখা উচিত।
পূর্বকোণ/ইব