ধানের সবচেয়ে বড় ও ভরা আমন মৌসুমে অস্থির চালের বাজার। অথচ নতুন ধান বাজারে আসলে চালের দাম কমার কথা। এখন উল্টোপথে হাঁটছে চালের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি দাম এক শ থেকে তিন শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের অন্যতম বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, “ধানের মোকামে সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়েছে। কর্পোরেট গ্রুপ ঘিরে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের দামে।
প্রবীণ এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘জিরাশাইল, কাটারি সিদ্ধ, কাটারি আতপ, নাজিরশাইল, মিনিকেট সিদ্ধ, মিনিকেট আতপ চালের দাম বেশি বেড়েছে। বস্তায় তিন শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের বড় মৌসুমে এভাবে দাম বাড়ানো অকল্পনীয়।’
ব্যবসায়ীরা জানান, গত মাসে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। এতে প্রভাব পড়েছিল চালের বাজারে । বাপ্রতি দুই শ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছিল। কিন্তু সরকার অনুমোদন দেওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত চাল আমদানি করেনি আমদানিকারকেরা। সেই সুযোগে চালের বাজার ফের অস্থির করে তুলেছে পুরোনো সিন্ডিকেট।
জানা যায়, গত জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে চাল আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার ২৩২ টন। তবে ভারত থেকে আমদানি করা চালের মান ভালো ছিল না । ক্রেতার আগ্রহ ছিল না। তাই বাজারে প্রভাব ফেলতে পারেনি আমদানি করা চাল ৷ চট্টগ্রামে উৎপাদিত ধান থেকে এখানকার চাহিদা মেটানো যায় না। এখানকার চাহিদা মেটাতে হয় উত্তরবঙ্গের চাল দিয়ে। উত্তর বঙ্গের নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, শান্তাহার, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার মোকাম ও মিলার থেকে চাল সংগ্রহ করেন চট্টগ্রামের আড়তদার এবং ব্যবসায়ীরা। ৮০-৯০ শতাংশ চাল উত্তরবঙ্গ থেকে এনে চট্টগ্রামের চাহিদা মেটাতে হয় বলে জানান ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন।
চালের পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী ও চাক্তাই বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অজুহাতে বেড়েছিল চালের দাম। আগস্ট মাসে সরকার পতনের পর আরেক দফায় বেড়েছিল। পরিবহন সংকট ও গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে দুই দফায় বাড়ানো হয়েছিল। এর পর তৃতীয় দফায় বাড়ে বন্যার অজুহাতে। এখন চতুর্থ ধাপে অকারণে বেড়েছে চালের দাম ।
জুলাই ও আগস্ট মাসে নানা ছুঁতোয় চার দফায় চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫-৬শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। ওই সময়ে মিলার এবং আড়তদাররা বলেছিল, ডিসেম্বর আমন ধান বাজারে আসলে চালের দাম কমবে। কিন্তু এখন উল্টো হয়েছে চালের বাজার । আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজার বড় শিল্প গ্রুপ ও মিলার সিন্ডিকেট জিম্মি। বাজার মনিটরিং না থাকায় কারণে-অকারণে ছুঁতো ধরেই চালের দাম বাড়ানো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
তবে চাল মিল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়তি থাকায় চালের দামও বেড়েছে। বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা। অথচ গত বছর তা ৯০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলার ধানও চলে যাচ্ছে অন্য জেলায়। মোটা ধান থেকে চিকন (উন্নতমান ও দামি) বানানোর মিল চট্টগ্রামে নেই। অসম ব্যবসায় ছোট মিলারদের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। চালের ব্যবসা উত্তরবঙ্গের বড় মিলার ও শিল্প গ্রুপগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।’
চট্টগ্রামের চালের পাইকারি মোকামে দেখা যায়, বাজারে স্বর্ণা সিদ্ধ (ভালো মান ) চাল সপ্তাহের ব্যবধানে ২৭০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২৮৫০ টাকা দূরে। শুঁটি স্বর্ণা ২৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৫৫০-২৬০০ টাকা। মিনিকেট সিদ্ধ ২৮৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩১০০-৩১৫০। মিনিকেট আতপ ৩২০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল ৩৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৬৫০ টাকা। নাজিরশাইল ৩৭৫০-৩৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০০০। কাটারি আতপ ৩৫০-৩৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮০০- ৩৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পূর্বকোণ/পিআর