চট্টগ্রাম রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে বিজয় মেলায় উপচেপড়া ভিড়ে নাকাল দর্শনার্থী

আরাফাত বিন হাসান

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৩:২৪ অপরাহ্ণ

শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটা। সাধারণত ছুটির দিনে শহরে যান চলাচল কম থাকায় যানজট খুব একটা দেখা যায় না। তবে এদিন কাজীর দেউড়ি এলাকার আশপাশে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কে লালখান বাজার থেকে আসকার দিঘির পাড় পর্যন্ত, সিআরবি সড়কের পুরোটা এবং নূর আহমেদ সড়কের আলমাস সিনেমা হল থেকে লাভলেন পর্যন্ত দেখা গেল তীব্র যানজট। শুধু যানজট নয়, পুরো এলাকায় ছিল মানুষের ভিড়ও। লালখান বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কাজীর দেউড়ি এলাকার দিকে যাওয়ার পথে ক্রমেই বাড়তে থাকে ভিড়।

 

হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউ’র পর মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিল না আর। ছুটির দিনে এমন ভিড় রেডিসন ব্লু ও আর সার্কিট হাউসের মাঝামাঝি খোলা জায়গা ঘিরে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিজয় মেলা। প্রতিবছর ডিসেম্বরে পার্শ্ববর্তী অউটার স্টেডিয়ামে মাসব্যাপী এই মেলার আসর বসলেও এবার বদলেছে ভেন্যু। নানা দোলাচলের পর শেষ মুহূর্তে অনেকটা অনাড়ম্বরভাবেই হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউ ও সার্কিট হাউসের মাঝামাঝি খোলা জায়গায় আয়োজন করা হয় বিজয় মেলার।

 

গত বুধবার মেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়া উদ্দিন। বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সহযোগিতায় স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তিতে এই মেলার আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আগের ভেন্যুর চেয়ে নুতন ভেন্যু তুলনামূলক ছোট হওয়ায় ঘটেছে বিপত্তি। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে স্বাভাবিক জনাসমাগমই যেন ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে মেলা প্রাঙ্গণের। তুলানামূলক ছোট ভেন্যুর কারণে বিপাকে পড়েন দর্শনার্থীরা। ভিড়ে নাকাল দর্শনার্থদেরও কেউ কেউ ক্ষোভ ঝেড়েছেন আয়োজকদের প্রতি।

 

এদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকা থেকে তিন সন্তানকে নিয়ে মেলায় আসা গৃহবধূ সাদিয়া আক্তার বলেন, অনেক বেশি ভিড়। আমি প্রতিবারই বিজয় মেলায় আসি। এবার ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি লাগছে- এমন ভিড়। অনেক বেশি ধুলো। জায়গাটা ছোট, আরও বড় হলে ভালো হত। তাছাড়া মঞ্চের অনুষ্ঠানের কারণে বোধহয় ভিড়টা আরও বেশি হয়েছে।

 

তিন সন্তানকে নিয়ে মুরাদপুর থেকে আসা মো. নূরুন নবী বলেন, ছুটির দিনে ভিড় হওয়া স্বাভাবিক। তবে ভেন্যু একটু ছোট হয়ে গেছে।

 

হরেক রকমের মাটির তৈজসপত্র, নানা ধরনের শীতের পোশাক, শিশুদের খেলনা, কসমেটিক, গৃহসজ্জার নানা সরঞ্জাম, আচার, মুখরোচক খাবার, বই, বাহারি হাড়িপাতিলসহ নানা পণ্যের ১৭৫টি স্টল রয়েছে এবারের মেলায়। মূল মঞ্চে ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রাখা হয়েছে আবৃত্তি, নিত্য, গানসহ নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে ৬ দিনে ৬টি থিমও রাখা হয়েছে এবারের মেলায়। শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে বিনোদনমূলক নানা আয়োজন। মেলা প্রাঙ্গণের শেষদিকে শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে কয়েক ধরনের রাইড।

 

শুক্রবার সাড়ে সাতটার দিকে জমজ ছোটবোন সারিনা ও ইরিনাকে নিয়ে রাইডের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন কলেজ পড়ুয়া সোহানা। তিনি বলেন, ভিড়ের কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে, প্রচুর ধুলো। আমরা রাইডের জন্য টিকেট কেটে দাঁড়িয়েছি, সব মিলিয়ে ভালো লাগছে।

 

অতিরিক্ত ভিড়ে গত দুই দিনের চেয়ে বেড়েছে বিক্রিও। শিশুদের খেলনা বিক্রেতা আব্দুল আলিম বলেন, আজই স্টল রেডি করেছি। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি, ভালো বিক্রি হচ্ছে।

 

তবে কিছুটা হতাশ পাটের তৈরি নানা সামগ্রীর বিক্রেতা আরমান। তিনি বলেন, ভিড় আছে ঠিকই। তবে বিক্রি তুলনামূলক কম। ভিড় হলেই যে বিক্রি বেশি হয় এমনটা সঠিক না।

 

অতিরিক্ত ভিড় ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব আহমেদ নেওয়াজ বলেন, আজ যেরকম ভিড় হয়েছে এখন মনে হচ্ছে ভেন্যু আসলেই ছোট হয়েছে। ভেন্যু নিয়ে বিড়ম্বনার কারণে আমরা একটি সমস্যায় ছিলাম। শুরুর দিকে মেলা প্রাঙ্গণের একটি ফটক থাকায় সমস্যা হয়েছিল, পরে কতৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর হোটেল রেডিসন ব্লু’র দিকের ফটকটি খুলে দিয়েছি।

 

মেলা ঘিরে আশেপাশের সড়কে যানজট ও ভেন্যুর বিষয়ে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, মেলা ঘিরে শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে অতিরিক্ত জনাসমাগম থাকায় যানজট হয়েছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যানজট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে, আমি নিজেও ছিলাম। পরে পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া ভেন্যু একটু ছোট হয়ে গেছে, তবে বিকল্পও ছিল না খুব বেশি। আগামী বার নিশ্চয় সেটা বিবেচনায় থাকবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট