চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

সবজির বাজার : পাইকারির তিনগুণ দাম খুচরায়

আরাফাত বিন হাসান

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৫:৩০ অপরাহ্ণ

বাংলা পঞ্জিকার হিসাবে শীত আসতে আরও দু’দিন বাকি থাকলেও প্রকৃতিতে শীত এসে গেছে মাস খানেক আগেই। মাস দেড়েক আগে থেকেই কাঁচা বাজারে শোভা পাচ্ছে শীতের নানা সবজি। এরমধ্যে শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সরবরাহ। সরবরাহ বাড়ায় মুক্তবাজার অর্থনীতির চিরাচরিত রীতিতে কমবে দাম। সবজির পাইকারি বাজারে সেই রীতির বাস্তবায়ন ঘটলেও এখনও অনেকটা চড়া দাম রয়ে গেছে খুচরায়। তাই সরবারহ বাড়লেও এর পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
নগরে সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত রিয়াজউদ্দিন বাজারের চৈতন্য গলি। এই গলির দেড় শতাধিক আড়তে জমা হওয়া সবজিই চট্টগ্রামের অধিকাংশ মানুষের চাহিদা পূরণ করে। সেখানে অনেকটা ‘পানির’ দরে পাইকারিতে সবজি বিক্রি হলেও খুচরায় চড়া দামই গোনতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরীর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, অক্সিজেন, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়িসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকারির দেড় থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে নানা সবজি। সরবরাহ বৃদ্ধির বিষয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের সবজির আড়তদার ফারুক শিবলী বলেন, ‘প্রতিবছর এই সময়ে যেরকম সরবরাহ থাকে এবারও তেমনই আছে। আগের চেয়ে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দামও বেশ কম। আলুর দাম একটু বেশি, নতুন আলু বাজারে আসায় সেটির দামও কমে যাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রিয়াজউদ্দিন বাজারের চৈতন্য গলির আড়তে পাইকারিতে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি শিম। অথচ নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে সবজিটি। অর্থাৎ পাইকারির চেয়ে খুচরায় সবজির দাম আড়াই থেকে তিনগুণেরও বেশি। একইভাবে পাইকারিতে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ফুলকপি খুচরায় ‘দ্বিগুণেরও বেশি দাম’ ৫০ টাকায়, ২০ টাকার বাঁধাকপি ৪০ টাকায়, ২৫ টাকার বেগুন ও চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকায়, ৩০ টাকার শসা ৬০ টাকায়, ৪০ টাকার ঢেঁড়স ৮০-১০০ টাকায়, ১৫ টাকার মুলা ৩০ টাকায়, ১৫ টাকার লাউ ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে পাইকারিতে ৩৫ টাকার কাঁচা মরিচ খুচরায় ৮০ টাকায়, ২০ টাকার মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকায়, ২০ টাকার পটল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২০২১ সালের কৃষিপণ্য বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী সবজি বিক্রির ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মুনাফার বিধান থাকলেও তা মানছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। ৫০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছেন তারা। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া কোনো সবজির দোকানে রাখা হয় না মূল্য তালিকাও। সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মুনাফার চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন ও চড়া দামে সবজি বিক্রির বিষয়ে নগরীর ২ নম্বর গেট ও অক্সিজেন এলাকার একাধিক সবজি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সবজি ব্যবসায়ী জানান, বাড়তি পরিবহন খরচ, শ্রমিক ও কর্মচারীর মজুরি, বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়া সব মিলিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার টাকার খরচ মেটাতে হয় তাদের। তাই এসব খরচ যোগ হয় সবজির দামে। তাতে বাড়ে দাম।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আইনে অনেককিছুই আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। কাঁচাবাজারে স্বচ্ছতার জন্য রশিদ ব্যবস্থার প্রচলন নিশ্চিত করতে হবে, কৃষকদের বিপণন ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। তারা সরাসরি বিক্রি করতে পারলে ভোক্তা ও উৎপাদক দুই পক্ষই লাভবান হবে। আর কৃষকরা অর্থের জন্য দাদন নেয়, এটা বন্ধের জন্য ঋণ সহজ ও ব্যাপক করতে হবে। আর তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকিও বাড়াতে হবে, যে কোনো মূল্যে রশিদ ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। তাহলেই স্বচ্ছতা আসবে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট