১৪ বছর পর জনবল নিয়োগের জট খুলতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। মামলা জটিলতায় ২০১০ সালের পর থেকে কোন জনবল নিয়োগ দিতে পারেনি সংস্থাটি। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন সিডিএ চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন। শীঘ্রই জনবল নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিডিএ’র নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা এবং কাজের পরিধি বাড়লেও উল্টো কমেছে জনবল। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না সেবাপ্রার্থীরা। এ অবস্থায় সংকট কমাতে সিডিএ থেকে ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ জনবল নিয়োগের ক্ষমতা ফেরত দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিডিএকে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম।
এনাম কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সিডিএ’র জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোয় মোট পদের সংখ্যা ছিল ৫২০টি। পরবর্তীতে সাংগঠনিক কাঠামোর ৫২টি পদ বিলুপ্ত করা হয়। আবার সৃজন করা হয় ৫১টি পদ। সেই হিসেবে সিডিএ’র অনুমোদিত মোট পদের সংখ্যা ৫১৯টি। তবে বর্তমানে মোট ১৯৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণির ৫৮টি পদের মধ্যে ১৮টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪৭টি পদের মধ্যে ১০টি, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৪১টি পদের মধ্যে ৬৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ২৭৩টি পদের মধ্যে ১০২টি পদ শূন্য রয়েছে।
সিডিএ’র একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ১৯৮৪ সালের অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) দিয়ে এখনো সিডিএ চলছে। অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন ও জনবল নিয়োগের জন্য সিডিএ’র পক্ষ থেকে একাধিকবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে নতুন অর্গানোগ্রাম আলোর মুখ দেখেনি। এর পিছনে সিডিএ’র কিছু ‘অসাধু কর্মকর্তা’ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এক সময় সিডিএ নিজেই জনবল নিয়োগ দিতে পারলেও পরবর্তীতে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা মন্ত্রণালয় নিয়ে যায়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী লোকবল নিয়োগও দিয়েছে। কিন্তু সিডিএ ৪০ বছর আগের অর্গানোগ্রাম দিয়ে চলছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না।
যে কারণে জনবল আটকা:
২০১০ সালে সিডিএতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে সিডিএ’র সাবেক এক কর্মকর্তা এই নিয়োগের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার সংযুক্ত বাদী হয়েছেন স্টোনোগ্রাফার হাবিবুর রহমান। মামলাটি দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২১ সালে খারিজ হয়। জনবল নিয়োগের জন্য আদালত সিডিএ’র পক্ষে রায়ও দিয়েছিল। কিন্তু সেসময় জনবল নিয়োগে সিডিএ কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. হেমায়েত হোসেন।
সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিডিএতে জনবল নিয়োগ হয়নি। সিডিএ’র অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী প্রায় ২০০ পদ খালি রয়েছে। একটা সময়ে সিডিএ নিজে জনবল নিয়োগ দিতে পারতো। তবে পরবর্তীতে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা মন্ত্রণালয় নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে আশ^স্ত করেছে, জনবল নিয়োগের ক্ষমতা শীঘ্রই সিডিএ’র কাছে হস্তান্তর করা হবে। আমরা আশা করছি, আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। জনবল নিয়োগ দিতে পারলে অনেক সমস্যা দূর হবে। জনগণকে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারবো।
অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করা হবে জানিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, সিডিএ যেসব কাজ হচ্ছে, তাতে আমাদের প্রায় দেড় হাজার জনবলের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের লোকবলের সংখ্যা অনেক কম। আমরা জনবল নিয়োগের ক্ষমতা পেলে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেবো।
উল্লেখ্য, সিডিএ’র আওতাভুক্ত এলাকা হচ্ছে ১ হাজার ১৫২ বর্গ কিলোমিটার। এরবাইরে ৫টি পৌরসভা ও ৮টি উপজেলা (আংশিক) মিলে সিডিএ’র মোট এলাকা ১ হাজার ২৫৫ বর্গ কিলোমিটার করার কাজ চলছে।
পূর্বকোণ/পিআর