চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চীন থেকে চারটি নতুন কনটেইনার স্ক্যানার আমদানি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই থেকেই কনটেইনারের বক্সে বন্দী রয়েছে স্ক্যানার মেশিনগুলো। বছর পার হয়ে গেলেও একটি মেশিনও চালু করতে পারেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এখন প্রশ্ন, আর কবে চালু হবে সেই নতুন কনটেইনার স্ক্যানারগুলো?
গত দুই অক্টোবর চট্টগ্রাম সফরে এসে এনবিআর চেয়ারম্যান বৈঠক করেছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে। সেই বৈঠকে সিএন্ডএফ এজেন্টসদের পক্ষ থেকে দ্রুত ওই চার কনটেইনার স্ক্র্যানার চালুর বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন। তখন তাৎক্ষণিক এনবিআর চেয়ারম্যান দ্রুত স্ক্যানারগুলো স্থাপন ও চালুর বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
কিন্তু প্রায় দুই মাসের মত হয়ে গেলেও এখনো একটি স্ক্যানার মেশিনও চালু করা যায়নি। সর্বশেষ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) দুই নম্বর গেটে একটি স্ক্যানার চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেটিরও কাজ শেষ হয়নি। এরপর পর্যায়ক্রমে এনসিটি ৪, ৫ এবং সিসিটি (চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল) ২ নম্বর গেটে বাকি তিনটি বসানোর কথা রয়েছে।
চোরাচালান রোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য পরিবহনরোধে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটিসহ অত্যাধুনিক ছয়টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার বসানোর কাজ ২০২১ সালে শুরু করে এনবিআর। স্ক্যানারগুলো ক্রয়ের ব্যপারে চীনা প্রতিষ্ঠান নাকটেক কোম্পানি লিমিটেডের সাথে গত বছরের (২০২৩ সাল) ৪ জানুয়ারি এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ছয়টি স্ক্যানার বসানোর জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ হয় ১৪৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চীনা প্রতিষ্ঠানটি স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পর আগামী পাঁচ বছর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রথমবার টেন্ডার আহবান করে। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ দরপত্র আহ্বান করার পর করোনাসহ বিভিন্ন গ্যাঁড়াকলে চার বার পিছিয়েছিল টেন্ডারের তারিখ (২৪ জুন, ১৫ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট)। সে বছরের ২৫ আগস্ট টেন্ডার শেষে তিন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র পাঠানো হয় মূল্যায়ন কমিটির কাছে। কিন্তু তাদের মধ্যেও যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এনবিআর।
এর প্রেক্ষিতে এস্ট্রোফিজিক্স ইনকর্পোরেশন নামের এক দরদাতা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বিভাগ ‘সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ)’ এক অভিযোগ দাখিল করে। তবে এনবিআরের বিপক্ষে ওই অভিযোগ বাতিল করে সিপিটিইউ। পরে ওই দরদাতা আশ্রয় নেয় উচ্চ আদালতের। সেখানেও রায় এনবিআরের পক্ষে যায় এবং কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয়ের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়। এতে এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে স্ক্যানার আছে নয়টি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে এফএস ৩০০০ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার।
এছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। ৪ নম্বর গেট ও সিপিএআর গেটে রয়েছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার।
পূর্বকোণ/ইব