একনেক সভায় উঠছে চট্টগ্রাম ওয়াসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্যুয়ারেজ প্রকল্প। আগামী ২৫ নভেম্বর ওই সভায় এটি অনুমোদন হলে মাঠে গড়াবে প্রকল্পটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসা যৌথভাবে প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ওয়াসার স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় পুরো চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। প্রণীত প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জোন-১ এর কাজ শুরু করে ওয়াসা। এরপর অন্য ৫টি ক্যাচমেন্টের মধ্যে দুই ও চার নিয়ে আরেকটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প তৈরি করে সরকারি সেবা সংস্থাটি।
নগরীর কালুরঘাটের হামিদচর এলাকায় প্রকল্পের মূল স্থাপনা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। এটির দৈনিক ধারণক্ষমতা হবে ৬০ হাজার ঘনমিটার। এছাড়া প্রকল্পের অধীনে প্রধান স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করা হবে ১১ কিলোমিটার, শাখা স্যুয়ারেজ লাইন ৭০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস লাইন হবে ৭০ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৯৩২টি ম্যানহোল এবং গৃহ সংযোগ ও ক্যাচপিট নির্মাণ হবে ১৪ হাজার করে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর জামালখান, চকবাজার, চান্দগাঁও, শুলকবহর ও ষোলশহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এ থেকে উপকৃত হবে। বাংলাদেশ সরকার, চট্টগ্রাম ওয়াসা ও জাপানের জাইকার যৌথ অর্থায়ন করবে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে জাইকা দেবে ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৯৬৯ কোটি টাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা বহন করবে ৩৯ কোটি টাকা।
ওয়াসার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য বাকলিয়া মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত এলাকায় ৭৪ একর জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদনের পর এসব ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার পাশা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ওয়াসার ক্যাচমেন্ট দুই ও চার নিয়ে আরেকটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী ২৫ নভেম্বর অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি একনেক সভায় উঠবে। ওই সভায় অনুমোদন হলে মাঠে গড়াবে প্রকল্পটি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার সংস্থা তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে।
নগরীর হালিশহরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১৬৩ একর জায়গায় পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। আগামী ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার।
স্যুয়ারেজ বা পয়ঃনিষ্কাশন সেবা প্রসঙ্গে ওয়াসার অপর এক সূত্র জানায়, নগরবাসীর বসতবাড়ি থেকে বৃষ্টির পানি ছাড়া আরও দুই ধরনের তরল বর্জ্য নিঃসৃত হয়। এগুলো হলো- বাসাবাড়ির রান্নাঘর ও গোসলখানার এবং টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের নির্গত পানি। এ পানি সরাসরি রাস্তার পাশের নালায় গিয়ে পড়ে।
পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা হচ্ছে নিঃসৃত এ দুই ধরনের তরল বর্জ্যরে নালায় প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করা এবং নালার পরিবর্তে তরল বর্জ্য সরাসরি রাস্তায় স্থাপিত পাইপের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে পরিশোধন প্ল্যান্টে পাঠিয়ে দেয়া। প্ল্যান্টে পরিশোধনের পর তা পুনরায় পরিবেশে ছেড়ে দেয়া।
এ ব্যবস্থায় যুক্ত বসতবাড়িতে আর কোন সেপটিক ট্যাংক ব্যবহার বা নির্মাণের প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বাড়ির ছাদ থেকে নির্গত বৃষ্টির পানি রেইন ওয়াটার পাইপের মাধ্যমে সরাসরি রাস্তার পাশে নালায় প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ থাকবে। এককথায় বৃষ্টির পানি ব্যতীত বাসাবাড়ির সকল তরল বর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধন প্ল্যান্টে নিয়ে পরিশোধন করা হলো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
পূর্বকোণ/এমটি