চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

শুল্ক হ্রাসেও অস্থির ভোজ্যতেল

আরাফাত বিন হাসান

১৯ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:০৭ অপরাহ্ণ

বাজারে অস্থিরতা ঘিরে গেল মাসে চিনি-ডিমসহ নানা পণ্যের সঙ্গে ভোজ্য তেলেরও শুল্ক কমিয়েছে সরকার। এরমধ্যে গেল ১৪ নভেম্বর আমদানি পর্যায়ে আরেক দফা কমানো হয় ভোজ্য তেলের মূসক কর। তাতে পাম তেলের দাম কিছুটা কমলেও এখনও অস্থিরতা কাটেনি বাজারে।

 

দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিমন (৩৭.৩২ কেজি) পাম তেল ৬ হাজার ১৫০ টাকা এবং সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে গেল কয়েকদিনে মনপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে পাম তেলের দাম। ভোজ্য তেলের চড়া দামের কারণে খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট সৃষ্টি হয়, কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছড়িয়ে যায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টের ঠিক মাঝামাঝি সময় থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে থাকে পাম তেলের দাম। গেল ১১ নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় ৪০ শতাংশের বেশি দাম বেড়ে যায় পণ্যটির। এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। আড়াই মাসের ব্যবধানে দেশে পাম তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। আগস্টের মাঝামাঝি যেখানে মনপ্রতি পাম অয়েলের দাম ছিল ৩৮০০ টাকা। সেটা কয়েক দফা বেড়ে সম্প্রতি দাঁড়ায় ৬৪০০ টাকা। তবে বর্তমানে কিছুটা কমে তা ৬ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

পাম তেলের প্রভাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে দাম বাড়ে সয়াবিন তেলের। নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় ১৯ শতাংশের বেশি দাম বেড়ে যায় পণ্যটির। এতে সেপ্টেম্বরের শুরুতেও মনপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) ৫ হাজার ৭০০ টাকা দামে বিক্রি হওয়া সয়াবিন তেলের দাম দেড় মাসের ব্যবধানে ১১শ টাকা বেড়ে ৬ হাজার ৮০০ টাকা ছড়িয়ে যায়। এতে ভোজ্যতেলের দেশীয় বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম পূর্বনিধারিত থাকায় লোকসানের অজুহাতে সরবরাহ বন্ধ করে দেয় মিল মালিকরা।

 

এতে আরও বেড়ে যায় অস্থিরতা। এরমধ্যে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে বাণিজ্য উপদেষ্টা। নানা পর্যায়ে কমানো হয় শুল্ক। একই সময়ে পাম তেলের কিছুটা দাম কমে আন্তর্জাতিক বাজারে। পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ মূসক অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর।

 

পরিশোধিত ও অপরিশোধিত পাম ও সয়াবিন তেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ের মূসক ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা বলবৎ রাখবে সরকার। এরমধ্যে মিল মালিকরা ডিলার পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ রাখলে ১৪ নভেম্বর তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আরও আমদানি পর্যায়ে মূসক কর আরও ৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

 

মিল মালিকরা বলছেন, একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দাম, অন্যদিকে তারল্য সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন তারা। আবার দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া সরকার। তাই লোকসানের মধ্যেও বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে হচ্ছে তাদের। অবশ্য শুল্ক কমানোর উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তারা।

 

খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বাজারে সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক না। তবে শুল্ক কমানোর খবরে পাম তেলের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু মিল মালিকদের সদিচ্ছা না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না, সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। আবার মিল মালিকদেরও আমদানির সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে।

 

এই প্রসঙ্গে টি কে গ্রুপের পরিচালক তারিক আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে এখানেও বেড়েছে। এখন শুল্ক কমানো হয়েছে, দামটা সমন্বয় করা যাবে। সরবরাহও ঠিক রেখেছি আমরা, আশা করি শুল্ক কমানোর সুফল পাওয়া যাবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট