চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

ফেব্রুয়ারিতে কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ শুরু

*­­কর্ণফুলী টানেল ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন’ *­­বাসা-বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ নয় *­­বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে ধীরস্থিরভাবে এগুচ্ছি *­­দ্রুতই ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

আগামী ফেব্রুয়ারি (২০২৫) মাস থেকে নতুন কালুরঘাট রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) নগরীর সার্কিট হাউসে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

 

সভায় উপদেষ্টা ফাওজুল কবির চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত ট্রেন চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি। হয়তো দ্রুতই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। চেষ্টা থাকবে এই রুটে দুটি ট্রেন চালু করার। নিয়মিত ট্রেন চালুর পাশাপাশি আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নতুন কালুরঘাট রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণের কাজও শুরু হবে।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা ‘অপরিকল্পিত ও অপচয়ের’ উন্নয়নের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল- আমরা সুইজারল্যান্ড হয়ে গেছি; সিঙ্গাপুর হয়ে গেছি। কিন্তু সম্ভবত যেখানে ছিলাম তার থেকে পিছিয়ে গেছি।

 

‘অপরিকল্পিত ও অপচয়ের’ উন্নয়ন নিয়ে ব্যাখ্যাও দেন ফাওজুল। তিনি বলেন, খুলনায় আট হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে। সেখানে গ্যাস নেই। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছিল এখান থেকে বছরে ১৪শ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে। যখন জিজ্ঞেস করলাম, ‘গত ছয় মাসে কত টাকা পেয়েছো’; বললো, ‘৩৭ কোটি টাকা’।

 

কর্ণফুলী টানেল অপরিকল্পিত উন্নয়ন দাবি করে ফাওজুল কবির খান বলেন, পরিকল্পনাটি ছিল মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। ইকোনমিক জোন হবে। আর্থিক কর্মকাণ্ড হবে। টানেল দিয়ে সমুদ্রবন্দর থেকে জিনিসপত্র আসবে-যাবে। ইকোনমিক জোন থেকে মালামাল যাবে। অথচ কিছুই হয়নি। শুধু বিদ্যুৎ প্লান্ট হয়েছে। ট্রাফিক পাবেন কোথায়? এখন দেখি কী করা যায়।

 

বর্তমান সরকার এগুলো বন্ধ করতে চায় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন চলবে না। তথাকথিত উন্নয়ন চলবে না। অপচয়ের উন্নয়ন আমরা করবো না। আমাদের এটা কোন প্রচার-প্রোপাগান্ডা কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে কীভাবে অপচয় কমানো যায়, সে বিষয়ে কাজ করা। আমরা সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলেছি যে, আপনারা অপচয় কমান।

 

সভায় বাসা-বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রতিদিন চার হাজার এমএমসিএফটি গ্যাস দরকার। স্থানীয় উৎপাদন এবং আমদানি মিলে তিন হাজার। এজন্যই গ্যাসের সংকট। চাহিদা মেটাতে চলতি বছরই ক‚প খনন করা হবে। সমুদ্রেও অফশোর বিডিং রাউন্ড করবো। যদি বড় ডিপোজিট পাই, তাহলে এলএনজি আমদানি বন্ধ করতে পারবো।

 

ভারতের আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সহজে বের হওয়া যায় না। বের হলে মামলায় জড়াতে হতে পারে। এজন্য ধীরস্থিরভাবে এগুচ্ছি। আমরা একটা জাতীয় কমিটি করেছি। কমিটি বিদ্যুতের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখবে। কী কী অনিয়ম- সেগুলো বের করতে চাই। এরপর ফাইন্ডিংসের ভিত্তিতে কাজ করবো।

 

জ্বালানি তেল পরিশোধনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরুর কথাও বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তায়নের কারণে এই রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। এটা একজন দখল করে নিয়েছিল। এই যে দখলের মানসিকতা- টাকা, রিজার্ভ, জমি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যাংক দখলের যে অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল, আমরা সেটা অপসারণ করছি।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির বলেন, সবাই বলে যে, ‘এই বুড়ো বুড়ো মানুষগুলো কী করে? তিন মাস হয়ে গেলো।’ আসলে আমরা কিন্তু কেউ বসে নেই। উপদেষ্টা পরিষদে যাদের আপনারা বলে বেড়াচ্ছেন বুড়ো মানুষ, তারা কিন্তু ইয়াংরা ফেসবুক টাইম বাদ দিয়ে যে সময়টা কাজ করে, তার চাইতে বেশি কাজ করে বেড়াচ্ছে।

 

উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। এ সরকার ক্ষমতাগ্রহণ করেনি, ছাত্র-জনতার অনুরোধে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দয়িত্ব গ্রহণ করলে সে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবসময় সর্তক থাকতে হয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ দায়িত্বকে আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে। তা রক্ষায় সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। সাধারণ জনগণ আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে আমরা দেশের সম্পদকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করি।

 

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেতু বিভাগের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী।

পূর্বকোণ/এমটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট