চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুই ডাম্পিং ইয়ার্ডে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

চট্টগ্রাম নগরে দাপিয়ে চলছে ব্যাটারি রিকশা

নাজিম মুহাম্মদ

১৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১:০২ অপরাহ্ণ

কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না ব্যাটারিচালিত রিকশা। নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো ব্যাটারিচালিত রিকশা দিন দিন বাড়ছেই। রেজিস্ট্রেশন নম্বর না থাকায় এ বাহনটির চালক কিংবা মালিকের বিরুদ্ধে মামলাও দিতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ।

 

নগরীতে কী পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কোন সংস্থার কাছে। তবে আনুমানিক ধারণা ৫০ হাজারের কাছাকাছি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সেখানে জব্দ করার পর রিকশাগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলামে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।

 

ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, নগর ট্রাফিকের চার বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হচ্ছে। নগরীর মনসুরাবাদ ও সদরঘাট ডাম্পিং ইয়ার্ডে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সীমাবদ্ধতার কারণে ১০দিন আটক রাখার পর রিকশাগুলো আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ছেড়ে দেয়ার পর সেই রিকশা আবার চলাচল করছে সড়কে। এতে চোর-পুলিশ খেলা হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

 

চার্জিং পয়েন্ট, গ্যারেজে অভিযান ও জব্দ করার পর ধ্বংস না করা পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখবে না, এমনটিই ধারণা নগর ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) জয়নুল আবেদীনের।

 

ডিসি জয়নুল আবেদীন জানান, ট্রাফিকের উত্তর জোনে প্রতিদিন ৪০-৫০টি ব্যাটারি রিকশা আটক করা হচ্ছে। একইভাবে ট্রাফিকের অন্য জোনেও আটক করা হচ্ছে। আগে আটকের পর ডাম্পিং ইয়ার্ডে ২১ দিন আটকে রাখা হতো। কমিশনার মহোদয় ২১ দিনের স্থলে আটক করে রাখার সময়সীমা ১০ দিন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ডাম্পিং ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দীর্ঘসময় আটকও রাখা যাচ্ছে না।

 

ডিসি জয়নুল বলেন, আটক করে কয়দিন জব্দ রেখে ব্যাটারি রিকশা নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সফলতা আসবে না। চার্জিং পয়েন্ট, গ্যারেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলে এবং আটক করার পর অবৈধ এ রিকশাগুলো ধ্বংস করা হলে হয়তো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে একমাত্র সিটি কর্পোরেশন। কারণ বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন নম্বর না থাকায় ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে মামলাও দেয়া যাচ্ছে না।

 

ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাহবুর আলম খান জানান, বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ ও টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেট সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা খুব একটা চলাচল করে না। তবে চকবাজার, চট্টেশ্বরী কিংবা কাজীর দেউড়ি এলাকায় চলাচল করছে না- তা কিন্তু নয়। প্রতিদিন আটক হচ্ছে। যেমন- বুধবারও (গতকাল) ৪০টি রিকশা আটক করা হয়েছে। কিন্তু মামলা দেয়ার সুযোগ না থাকায় ১০ দিন আটকে রাখার পর গাড়িগুলো মালিকের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।

 

বিআরটিএ চলতি বছরের ১৯ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যাটারি বা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণির থ্রি-হুইলার চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যান্ত্রিক যেকোন যানবাহন সড়কে চলাচলের জন্য বিআরটিএর লাইসেন্স, রুট পারমিট ও ফিটনেস নিতে হয়। আইনে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ইজিবাইকের অনুমোদন দেয়ার কোন বিধান নেই।

 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক জানান, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকের পর স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যাটারি, মোটর ও রিকশার বডি আলাদাভাবে নিলামে তোলা হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক ও ছাড়ার মধ্যে একটি বাণিজ্য রয়েছে। বিগত সরকারের আমলের অনেক কর্মকর্তা এখনও সিএমপিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তারা নতুন পুলিশ কমিশনারকে খুব একটা সহযোগিতা করছেন বলে মনে হচ্ছে না। আমরা ঢাকা শহরে ১৭ হাজার মানুষের উপর একটি জরিপ চালিয়েছিলাম। তাতে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ মানুষ এ যানবাহন ব্যবহার করছে। প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে সংযোগ সড়কগুলোতে সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাটারি রিকশা চলাচল করতে পারে- এমনটি মতামত দিয়েছি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে।

 

জানা যায়, ২০১৮ সালে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করতে দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও প্যাডেলচালিত রিকশার পক্ষে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সিদ্দিক মিয়া এই রিট করেছিলেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা  দিয়েছিল।

 

পরবর্তী সময়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতি। আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এরপর নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগ।

 

অভিযানের মুখে ব্যাটারি রিকশা চলাচল একপর্যায়ে সীমিত হয়ে এসেছিল। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অভিযানে ভাটা পড়লে ফের নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল শুরু হয়। প্রথমদিকে প্রধান সড়কের সংযোগ সড়ক ও অলিগলিতে নামলেও এখন প্রধান সড়কেও দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে নগরীতে ব্যাপকহারে বেড়েছে ব্যাটারি রিকশার চলাচল।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট