পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পাঁচরিয়া এলাকার কৃষক মো. সৈয়দ। গত বছর বোরো মৌসুমে তিন কানি জমিতে চাষ করেছিলেন। কিন্তু খরা আর লবণপানিতে অর্ধেকের বেশি জমির চারা পুড়ে যায়। বাকি যা ছিল, তাতে ভালো ফলন হয়নি।
পাঁচরিয়ার সৈয়দ ছাড়াও একই এলাকার বহু কৃষক বোরো ও আমন চাষে মার খেয়েছিল। পর পর দু-তিন বছর ধরে লবণপানি, খরা ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণে শত শত কানি জমির আমন চারা পুড়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানান, গত তিন বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর পানিতে লবণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। লবণপানির কারণে সাগর ও কর্ণফুলী নদীবেষ্টিত পাঁচ উপজেলায় বোরো-আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। সাগর ও নদীর লবণপানি খালের মাধ্যমে ধানি জমিতে মিশে শত শত একর জমির চারা পচে নষ্ট হয়ে যায়। তিন বছর ধরে আমন মৌসুমে মার খেয়ে আসছেন শত শত কৃষক।
বোরো ধান হচ্ছে সেচনির্ভর। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ ও থোর বের হওয়া পর্যন্ত জমিতে পানি জমা থাকতে হয়। গত মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এতে ধানের ক্ষতি হয়েছে।
পর পর তিন মৌসুমে বোরো চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর টনক নড়ে কৃষি বিভাগের। গত বছর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক দল চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করে। একই সঙ্গে মাটির গুণাগুণ, রোপণ করা ধান ও পানিতে লবণের উপস্থিতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। শেষে লবণসহিষ্ণু জাতের ধান রোপণের পরামর্শ দেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক দল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিকদের পরামর্শে চলতি বছর থেকে লবণসহিষ্ণু জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আশা করছি, চলতি বছর থেকে লবণপানির সমস্যার কারণে বড় ধরনের সংকট হবে না।’
পটিয়া কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রমজান আলী বলেন, ‘আগাম জাতের আমন কাটা শুরু হয়েছে। লবণপানিতে তিন মৌসুমে ধানের চারা নষ্ট হয়েছিল। এবার লবণসহিষ্ণু জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।’
তবে কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো লবণসহিষ্ণু ৪-৫ জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ব্রি-৪৭ ও ৬৭ জাতের ধান কাটা হয়েছে। কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায়নি। জাতগুলো আরও ভালো করতে হবে। তবে হাইব্রিড জাতের ধানগুলো ভালো হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে লবণসহিষ্ণু জাতের ধান বীজ প্রদানের দাবি করেছেন কৃষকেরা।
জানা যায়, পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপের পাঁচরিয়া ছাড়াও কোলাগাঁও, জিরিসহ কর্ণফুলী নদীর সংলগ্ন বোয়ালখালী, কর্ণফুলী উপজেলা এবং সাগরবেষ্টিত আনোয়ারা ও বাঁশখালী- পাঁচ উপজেলার শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে বোরো ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক মনসুর আলম বলেন, ‘লবণ-শিল্পবর্জ্যমিশ্রিত পানিতে বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা ও রতনপুর এলাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। লবণ পানি ও ব্লাস্ট রোগে ধান পুড়ে যাওয়ায় বহু কৃষক মার খেয়েছে।’
পূর্বকোণ/পিআর